বিএনপি মাঠে থাকবে হুমকি আর হামলা মামলা ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নাই
নিউজ ডেস্ক:
|
এবার আর রাজপথ ছাড়বে না বিএনপি। হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা যতই ঘটুক, মাঠে থেকেই মোকাবিলা করবে দলটি। ইস্যুভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায় তারা। সমমনা বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে এবার বদ্ধপরিকর বিএনপি। বিশেষ করে চূড়ান্ত আন্দোলনের আগ পর্যন্ত জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে বেশি সরব থাকবে তারা। সাধারণ মানুষের কাছে দলের সমর্থন বাড়ানোর পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মধ্যেও সাহস বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে দলটি। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে একপর্যায়ে এক দফার আন্দোলনে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। দলটির নেতারা জানান, দেশজুড়ে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার ও সংঘর্ষের মতো ঘটনা বাড়তে থাকলেও যে কোনোভাবে রাজপথেই থাকবে তারা। রাজপথে থেকে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণের দিকনির্দেশনাও এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলার দায়িত্বশীল নেতা ছাড়াও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও চিঠি দিয়ে এসব বিষয়ে দেওয়া হয়েছে কঠোর বার্তা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, বিএনপির চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলার ঘটনার দায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। এসব হামলা ও নির্যাতন সরকারের অপরিণামদর্শী ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্ত। তবে সত্য ও ন্যায়ের পথে জনগণের বিজয় অনিবার্য। এ হামলার পর বিএনপি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নই উঠে না। বিএনপি তো আন্দোলন শুরুই করেছে। যারা ক্ষমতায় বসে আছে তাদের সরিয়ে গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেজন্য আমরা চাই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আবার একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে পেতে চাই। জ্বালানি তেল, পরিবহন ভাড়া, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ভোলায় ছাত্রদল নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। শুরুতে তেমন কোনো বাধা ছাড়াই এসব বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করতে পারলেও গত দুই দিন বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। অনেক নেতাকর্মী আহত হচ্ছেন। অনেক স্থানে বিএনপির ডাকা সমাবেশস্থলে ক্ষমতাসীন দলও সমাবেশ ডাকায় ১৪৪ ধারা জারি করছে প্রশাসন। অনেক স্থানে কর্মসূচি প্রস্তুতিকালে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এরপরও যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি পালনে কঠোর বিএনপির হাইকমান্ড। বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট তালিকায় ৪৮৭ উপজেলা, ৫১২ থানা, ৩১৪ পৌরসভা এবং চার হাজার ৫৭৩ ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে হামলার ঘটনা রয়েছে ৫০টির বেশি স্থানে। নোয়াখালী, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ১৫টির বেশি মামলা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন ৩ শতাধিক, গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই শতাধিক। আসামি করা হয়েছে দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, ফেনীর পরশুরামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে ২০টির বেশি জায়গায়। সমাবেশস্থলে হামলা ছাড়াও নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবিরুল ইসলাম সাবু, জেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, এসব হামলা-মামলার পরও দেশের বেশিরভাগ থানা-উপজেলায় দলটির কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অনেক স্থানে ইউনিয়ন পর্যায়েও কর্মসূচি পালন হচ্ছে। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব স্থানে হামলার ঘটনায় নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্যও দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, সামনের আন্দোলনের আগে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে এসব কর্মসূচিকে তাঁরা ওয়ার্মআপ হিসেবে দেখছেন। বিগত ১৪ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়নি। এবারের কর্মসূচিতে সারাদেশে একটি 'কম্পন' সৃষ্টি হয়েছে। দেশের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের থানা-উপজেলা পর্যায়ের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ নামছে। হামলা-মামলার ভয়কে উপেক্ষা করে এসব সমাবেশে সবাই স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। এটাকে দলের হাইকমান্ড ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। এজন্য যে কোনো উপায়ে তাঁরা এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চান। দলীয় সূত্র জানায়, কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ৮১ সাংগঠনিক জেলায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে সব পর্যায়ের কর্মসূচিতে নিজ নিজ জেলার সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতা ও বিগত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের উপস্থিত থাকাসহ ছয়টি নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও মৌখিকভাবে জেলা শাখার নেতাদের জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হলে সংশ্নিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার পতন আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এটা শুধু বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন স্বাধীনতা রক্ষার, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বাড়ার কারণে মানুষ আজ দিশেহারা। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষ জেগে উঠেছে। এখন সবাই চায় এই সরকারের পতন। বিএনপি আন্দোলনে আছে। সরকার ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠলে এ ধরনের হামলা-মামলার আশ্রয় নিতে পারে। এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভীত নয়। বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা জানান, তৃণমূল পর্যায়ে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাঁদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক স্থানে কর্মসূচির আগে থেকেই ধর-পাকড় শুরু হয়ে যায়। অনেক স্থানে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ভয়-ভীতি দেখানো ছাড়াও সরাসরি হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। পুলিশের সামনে এসব হামলার ঘটনা ঘটলেও তাঁরা নির্বিকার থাকছেন। এসব বাধা পেরিয়েও সমাবেশে নেতাকর্মীরা আসছেন। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, 'শুধু নেতাকর্মী নয়, আমার বাড়ির সামনেও সব সময় শত শত পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হচ্ছে। এরপরও নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালন করছে। এ কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ আমাদের আশান্বিত করছে।' কেন্দ্রীয় ও খুলনা মহানগর বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, যেখানেই কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে, সেখানেই প্রশাসন বাধা দিচ্ছে। ১৪৪ ধারা জারি করছে। গতকাল শনিবারও খালিশপুর থানার সমাবেশস্থলে হঠাৎ করে ১৪৪ ধারা জারি করে কর্মসূচি পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা করছে। বিএনপির দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দিচ্ছে। তবে এসব করে লাভ নেই। আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি আলাদাভাবে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করছি। বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান রোমান বলেন, বাকেরগঞ্জ থানা বিএনপির আজ রোববারের সমাবেশ কর্মসূচি উপলক্ষে আয়োজিত গারুরিয়া ইউনিয়নে প্রস্তুতি সভায় থানা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে ও কুপিয়ে ১৩ জনকে গুরুতর জখম করে। এছাড়া ২৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। পরে জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে তারা পালিয়ে যায়। এভাবে থানার ১৪টি ইউনিয়নে হামলা, ভয়-ভীতি ছড়িয়ে সমাবেশ বন্ধ করতে চাইলেও আমরা যে কোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করব।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |