কেবল ধূমপানই কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন
নিউজ ডেস্ক:
|
কেবল ধূমপানই কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকঃ খুব বেশিদিন আগের কথা নয় যখন ঘুরতে যাওয়া বলতে ঢাকার মানুষজন ঢাকার আশেপাশে কিংবা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যনির্ভর স্থানসমূহে যাওয়ার কথা বুঝতো। কিন্তু নাগরিক ও কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততা, দীর্ঘ যানজট, সর্বোপরি ঘুরতে যাবার স্থানের অপ্রতুলতার কারনে মানুষ চাইলেও আর আগের মত বেড়াতে যেতে পারছে না। বেড়ানোর জায়গার এই অপ্রতুলতার দরুন বর্তমানে শহুরে জীবনের অন্যতম প্রধান বিনোদনস্থলে পরিণত হয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট। শুধু ঢাকা-ই নয় অন্যান্য বিভাগীয় শহর এমনকি মফঃস্বল শহরগুলোতেও এখন চোখে পরে হরেক রকমের মেন্যু সম্বলিত অগণিত রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্ট ব্যবসার এই অবাধ উথান একদিকে যেমন আমাদের হাতের নাগালেই কোথাও বসে আড্ডা দেবার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অপরদিকে এই রেস্টুরেন্ট-নির্ভর বিনোদন ব্যবস্থা অনেকটা নীরবেই আমাদের দেহে সৃষ্টি করে চলেছে নানা রোগব্যাধি। বার্গার, স্যাণ্ডউইচ, ফ্রাইড চিকেন, পিজ্জা, পাস্তা, কাবাব, ফুচকা-চটপটি, বিরিয়ানি, ইত্যাদি খাবার অত্যন্ত মুখরোচক হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তাই এসব খাবার অতিরিক্ত গ্রহনের ফলে আজকাল আমাদের মধ্যে বিশেষত তরুণ সমাজের মধ্যে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হাইপার-টেনশন, কিডনি রোগ ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড (Junk Food) আমাদের দেহে যেসমস্ত রোগের সৃষ্টি করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছেঃ ১। স্থূলতাঃ ফাস্টফুডে কার্বোহাইড্রেড জাতীয় উপাদান ব্যাপক মাত্রায় থাকে। কার্বোহাইড্রেড মানে শর্করা; যা দেহের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। কিন্তু পরিমানের অধিক কার্বোহাইড্রেড বা শর্করা শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে যার মধ্যে মেদ ও চর্বি বৃদ্ধি অন্যতম। এই মেদ ও চর্বির বৃদ্ধির কারনে মানবদেহের ওজন বেড়ে যায় যা দেহের নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগের অন্যতম প্রধান কারন। ২। ডায়াবেটিসঃ বেশিরভাগ ফাস্টফুড ও জাঙ্ক ফুডেই অল্প ফাইবারযুক্ত শর্করা থাকে। এছাড়াও অনেক খাবার সুস্বাদু করার জন্য প্রায়শই অতিরিক্ত চিনি বা লবণ যুক্ত করা হয় যা শরীরের জন্য মোটেও উপকারী নয়। যখন দেহের হজম প্রক্রিয়া আমাদের গ্রহণকৃত এ খাবারগুলি ভেঙে দেয় তখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। অপরদিকে, ইনসুলিন সারা শরীর জুড়ে গ্লুকোজ নিয়ে যায়। ঘন ঘন উচ্চ পরিমাণে শর্করা খাওয়ার দরুন রক্তে শর্করায় বারবার স্পাইক তৈরি হয়। গ্লুকোজের মাত্রার এই প্রতিনিয়ত ওঠানামা অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং ধীরে ধীরে ইনসুলিনের নিঃসরণের পরিমাণও হ্রাস পেতে থাকে। এতে দেহে ইনসুলিন প্রতিরোধের টাইপ টু ডায়াবেটিস বৃদ্ধির ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ৩। হৃদরোগ ও স্ট্রোকঃ ফাস্টফুডকে অনেক বেশি সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় করতে ব্যবসায়ীরা ফাস্টফুডে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট মিশিয়ে থাকে। এছাড়াও জাঙ্ক ফুডে ট্রান্স ফ্যাট-ও বেশি থাকে। এগুলো শরীরে অপ্রয়োজনীয় বা খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। ৪। ক্ষুধামন্দা, হজমে সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসঃ জাঙ্ক ফুড ও ফাস্টফুড মাত্রই দেখতে আকর্ষণীয় এবং অত্যন্ত মুখরোচক। কিন্তু এতে দেহের জন্য অত্যাবশ্যক পুষ্টি, ভিটামিন, আয়রন, মিনারেল, ইত্যাদি কিছুই সঠিক পরিমাণে থাকে না। তাই এ ধরনের খাদ্যগুলো ক্ষুধামন্দা এবং দীর্ঘমেয়াদে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। এছাড়াও, প্রচুর তেলে ভাঁজা হবার কারনে এবং ক্ষেত্রবিশেষে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের কারনে অনেক ফাস্টফুড আইটেম হজমে সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ক্লান্তি, কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। ৫। প্রজনন সিস্টেমের ক্ষতিঃ জাঙ্ক ফুড এবং ফাস্টফুডে উপস্থিত উপাদানগুলি দেহের প্রজনন সিস্টেম উপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রক্রিয়াজাত এ খাবারগুলিতে এমন রাসায়নিক বিদ্যমান থাকে যা দেহের হরমোনের ক্রিয়াকে ব্যাহত করে যার ফলে প্রজনন সমস্যা দেখা দিতে পারে। ৬। ত্বক ও দাঁতের সমস্যাঃ বহুদিন ধরে খাবার উপযোগী করে রাখা হয় বলে ফাস্টফুড ত্বক ও দাঁতের নানা সমস্যার অন্যতম একটি কারণ। প্রতিনিয়ত ফাস্টফুড গ্রহণে ত্বকের সতেজতা কমে যায় এবং নানা স্কিনের সমস্যা যেমন ব্রণ, এলার্জি ইত্যাদি দেখা দেয়। এছাড়াও ফাস্টফুডে উপস্থিত কার্বস এবং চিনি থেকে অ্যাসিড তৈরি হয়, যা দাঁতের এনামেলকে ধ্বংস করে। ফলে দাঁত ব্যথা, দাঁত শিরশির করা সহ দাঁতের নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগ হতে পারে। ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড-এর আরেকটি বিপজ্জনক ব্যাপার হচ্ছে এটি মানুষকে একটি নির্দিষ্ট স্বাদের সংমিশ্রণে অভ্যস্ত করে ফেলে, ফলশ্রুতিতে স্বাভাবিক ঘরে তৈরি খাবার তাদের কাছে স্বাদহীন মনে হয়। ফাস্টফুড নিঃসন্দেহে তৃপ্তিদায়ক, কিন্তু পুষ্টিগুণের মানদণ্ডে এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণীয় হতে পারে না। সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে বড় হরফে লেখা থাকে “ধূমপানই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর”, কিন্তু জাঙ্ক ফুড আমাদের দেহের জন্য নানাভাবে ক্ষতিকর হলেও এ সম্পর্কে তেমন কোন সতর্কতা কোথাও চোখে পরে না। সুতরাং আপনি এবং আপনার পরিবার যদি এখনও ফাস্টফুডে অভ্যস্ত না হয়ে থাকেন তবে তা শুরু না করতে সচেষ্ট থাকুন। কিন্তু যদি এটি ইতিমধ্যেই আপনার ডায়েটে প্রবেশ করে থাকে, তবে ধীরে ধীরে তা থেকে সরে আসার চেষ্টা করুন।
দেওয়ান মাহমুদ মীম (সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |