‘প্রিন্স’ মুসা মুখরোচক কথা বলেন: ডিবি
নিউজ ডেস্ক:
|
নিজেকে ধনকুবের পরিচয় দেয়া মুসা বিন শমসেরকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে এনে সাড়ে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ বলেছেন। মুসা তার অঢেল সম্পদের যে দাবি করেন, সেসবের কিছু নেই বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। তবে জিজ্ঞাসাবাদে মুসা আবার দাবি করেছেন, সুইস ব্যাংকে তার ৮২ বিলিয়ন ডলার আটকে আছে। বাংলাদেশি টাকায় এটি প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা। এই টাকা আনতে পারলে তিনি পুলিশকে দেবেন ৫০০ কোটি টাকা। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী পরিচয় দেয়া নিজেকে প্রিন্স মুসা নামেও পরিচয় দেন। তিনি নানা সময় বেশ কয়েকজন কথিত দেহরক্ষী নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন। তবে তিনি ডিবি কার্যালয়ে আসেন স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে। খয়েরি রঙের সাদামাটা একটি প্রাইভেট কারে করে আসা মুসা পরেছিলেন কালো রঙের স্যুট। প্রাইভেট কারে কয়েকটি জায়গায় অন্য গাড়ি বা অন্য কিছুর আঁচড়, আঘাতও দেখা গেছে। সেগুলোও মেরামত করা হয়নি। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে ঢোকার পর মুসা বের হন সন্ধ্যা ৭টার দিকে। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দাবি করেন, যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তিনি তার প্রতারণার শিকার। অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার আবদুল কাদেরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে মুসার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের পরিচয় দিয়ে আসা আব্দুল কাদের চৌধুরী ওরফে কাদের মাঝি ও তার স্ত্রী শারমিন চৌধুরী ছোঁয়াকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১৪ বছর ধরে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। কাদের মাঝিকে গ্রেপ্তারে গিয়ে কিছু নথি দেখে গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, তার সঙ্গে মুসা বিন শমসেরের ওঠাবসা রয়েছে। এ জন্যই তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়। ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, ভুয়া অতিরিক্ত সচিব কাদেরের সঙ্গে সম্পর্কের দায় এড়াতে পারেন না মুসা। কথোপকথনে মুসা তার কথিত সম্পদ নিয়ে নানা বক্তব্য রেখেছেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার মনে হয়েছে, এসব দাবির সবই অসত্য। ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে উনি (মুসা) অন্তঃসারশূন্য। একটা ভুয়া লোক মনে হয়েছে। ওনার কিচ্ছু নাই। ‘তার একটা বাড়ি রয়েছে গুলশানে। সেটাও স্ত্রীর নামে। বাংলাদেশে তার নামে আর কিছু পাই নাই। তবে উনি মুখরোচক গল্প বলেন।’ মুসাকে কী জিজ্ঞাসা করেছেন, জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘ওনাকে আমার কাছে রহস্যময় মানুষ মনে হয়েছে। কাদের নাইন পাস লোক, তাকে উপদেষ্টা বানালেন কেন? ২০ কোটি টাকার চেক দিলেন কেন? ‘উনি (মুসা) বলেছেন লাভ দেবে। কিন্তু উদ্দেশ্য আমরা জানি না। মুসা সাহেব দেখেছেন, কাদের মাঝি বড় বড় লোকের সঙ্গে কথা বলেন। কাদেরের সঙ্গে ওনার অনেক সম্পর্ক রয়েছে। উনি বাবা-সোনা ডাকেন। ছেলের চেয়েও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।’
পুলিশকে ৫০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রলোভন মুসা নানা সময় বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তিকে বড় অঙ্কের টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের আগে তিনি অনুদানের ঘোষণা দিয়ে একবার দেশটির গণমাধ্যমের খবর হয়েছিলেন। যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে ঝামেলা চলছিল, সে সময় সুইস ব্যাংকে টাকা আছে দাবি করে তা উদ্ধার করে আনতে পারলে এই সেতু করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েও আলোচিত হন। এবার পুলিশকে ৫০০ কোটি টাকা দেয়ার কথা বলে এসেছেন তিনি। ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ৮২ বিলিয়ন ডলার প্রসঙ্গে বলেছেন। বলেছেন, সুইস ব্যাংকে টাকাটা আটকা আছে। এই টাকা পেলে তিনি পুলিশকে ৫০০ কোটি টাকা দেবেন, দুদককে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে বিল্ডিং করে দেবেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেবেন। এগুলো বলেছেন।’
‘কাদের মাঝির সঙ্গে সম্পর্ক এড়াতে পারেন না’ ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘উনি (মুসা) কী টাইপের মানুষ আমরা বুঝি না। তবে ওনার সঙ্গে ভুয়া এডিশনাল সেক্রেটারি কাদের মাঝির যে সম্পর্ক, এর দায় তিনি এড়াতে পারবেন না।’ তিনি জানান, মুসা তাদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। উনি নিজেও মামলা করবেন। ‘আমরা সবকিছু তদন্ত করছি। আমরা যেটা করা দরকার সেটাই করব। উনি মামলা করলে সেটাও আমরা তদন্ত করব’- বলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
‘দেহরক্ষী’ ছাড়া কেন? এর আগে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা অনেক কথিত দেহরক্ষী নিয়ে গেলেও ডিবি কার্যালয়ে কেবল পরিবার নিয়ে আসার কারণ কী- এমন প্রশ্নও ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের। গোয়েন্দা যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা বলে দিয়েছিলাম, ডিবির ভেতরে কোনো বডিগার্ড নিয়ে আসা যাবে না।’ অবশ্য মুসার এই দেহরক্ষী নিয়েও নানা মুখরোচক আলোচনা আছে। একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, এরা কেউ তার দেহরক্ষী নয়। তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখার কর্মী। লোক দেখানোর জন্য তাদের দেহরক্ষী বানিয়ে উপস্থাপন করা হয়। |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |