৩৪ চেয়ারম্যান পদের ১০টিতে হার আ'লীগের
নিউজ ডেস্ক:
|
অনেকটা একতরফা নির্বাচনেও ৩৩ শতাংশ পদে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। জেলা পরিষদের এই ভোটে দলীয় প্রতীক না থাকলেও ক্ষমতাসীনরা সবক'টি জেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছিল। গতকাল সোমবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৪ জেলার মধ্যে অন্তত ১০ জেলার চেয়ারম্যান পদে তাঁদের ভরাডুবি ঘটেছে। এর মধ্যে ৯টিতেই জয় নিশ্চিত করেছেন নিজ দলের বিদ্রোহীরা। এই জেলাগুলো হচ্ছে- ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, শেরপুর, দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার। দিনাজপুরে অবশ্য জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরেছে আওয়ামী লীগ। এর বাইরে বেশ কয়েকটিতে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। পার্বত্য তিন জেলা বাদে ৬১ জেলার তপশিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালীর ভোট স্থগিত হয়ে যায়। ভোলা ও ফেনী জেলার চেয়ারম্যান ও অন্যান্য পদের সবাই বিনা ভোটে জয় নিশ্চিত করেন। গতকাল সারাদেশের ৫৭টি জেলায় ভোট নেওয়া হয়। এর মধ্যে ভোলা, ফেনীসহ ২৫টিতে শুধু চেয়ারম্যান পদে ভোটের আগে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। ফলে গতকাল চেয়ারম্যান পদে ভোট হয় ৩৪ জেলায়। ১০ জেলায় পরাজিত আওয়ামী লীগ :আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন দিনাজপুরের আজিজুল ইমাম চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ৭৮ ভোট। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ১ হাজার ১৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
২৪টিতে জিতেছে আওয়ামী লীগ :বিনা ভোটে ২৫টি চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হওয়ার পাশাপাশি গতকাল সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছেন ২৪টিতে। এর মধ্যে কয়েকটিতে তাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছ থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন। মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম মহিউদ্দিন মাত্র ২৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৪৫২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৪২৫ ভোট। গাইবান্ধায় আবু বকর সিদ্দিক পেয়েছেন ৫৮৩ ভোট। তাঁর নিকটতম জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতাউর রহমান সরকার আতা পেয়েছেন ৫২৩ ভোট। নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মমতাজুল হক পেয়েছেন ৫৪৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন ৩১৮ ভোট। খুলনায় শেখ হারুনুর রশীদ পেয়েছেন ৫৩৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা পেয়েছেন ৪০৩ ভোট। গাজীপুরে মোতাহার হোসেন মোল্লাহ পেয়েছেন ৩৬২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম মোকসেদ আলম পেয়েছেন ২৬৭ ভোট। হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী পেয়েছেন ৯৬১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মোল্লা আবু নঈম পেয়েছেন ৭৭ ভোট। নেত্রকোনায় অসিত কুমার সরকার সজল পেয়েছেন ৯৩৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আসমা সুলতানা আশরাফ পেয়েছেন ১৯২ ভোট। জয়পুরহাটে খাজা শামসুল আলম ৩৯৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদের নেতা আবুল খায়ের মো. সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন ৯৬ ভোট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আল মামুন সরকার পেয়েছেন ৮২২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল আলম পেয়েছেন ৫৫৩ ভোট। কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান পেয়েছেন ৯৫৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আশরাফ উদ্দিন রেনু পেয়েছেন ২৫৮ ভোট। যশোরে সাইফুজ্জামান পিকুল ৯৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এলডিপির মারুফ হোসেন কাজল পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট। নড়াইলে সুবাস চন্দ্র বোস ২৬০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সৈয়দ ফয়জুর আমির লিটু পেয়েছেন ১৭৮ ভোট। চাঁদপুরে ওচমান গণি পাটোয়ারী ৭৩৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকির হোসেন ৫২২ ভোট পেয়েছেন। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পান ৫৯৮ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তারুজ্জামান আক্তার পেয়েছেন ৫৬৬ ভোট। চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মনজু ৩১২ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু পেয়েছেন ২৪৯ ভোট। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ফের জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলহাজ নজরুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৬০৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঢাকাস্থ সাতক্ষীরা জেলা সমিতির সভাপতি খলিলুল্লাহ্ ঝড়ূ পেয়েছেন ৪৪৭ ভোট। মেহেরপুরে ১৭৬ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম এবং তাঁর নিকটতম প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রসুল পেয়েছেন ১১৫ ভোট। কুষ্টিয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা সভাপতি মো. সদর উদ্দিন খান আনারস প্রতীকে ৭৩১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম মহসিন পেয়েছেন ২০৪ ভোট। মাগুরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু ৩৫৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শরীয়ত উল্লাহ হোসেন মিয়া পেয়েছেন ১২৯ ভোট। রাজবাড়ীতে পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম শফিকুল মোরশেদ আরুজ বেসরকারিভাবে ৪২৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দীপক কুণ্ডু পেয়েছেন ১৩৮ ভোট। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ হাজার ১৩৮ ভোট ও তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ সমর্থিত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম আমিন পেয়েছেন ৪৫৮ ভোট। নাটোরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাজেদুর রহমান খাঁন ৫৪৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি-জাপা মনোনীত নুরুন্নবী মৃধা পেয়েছেন ২৪৭ ভোট। বগুড়ায় ফের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মকবুল হোসেন ৮৭৪ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ পেয়েছেন ৭২১ ভোট। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২ হাজার ৫৬৭ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নারায়ণ রক্ষিত পেয়েছেন ১২৪ ভোট। বিনা ভোটে জয়ী ২৫ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হলেন যাঁরা : কুমিল্লায় মফিজুর রহমান বাবলু, কুড়িগ্রামে মো. জাফর আলী, গোপালগঞ্জে মুন্সি মো. আতিয়ার রহমান, জামালপুরে মো. বাকী বিল্লাহ, ঝালকাঠিতে খান সাইফুল্লাহ পনির, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক, ঠাকুরগাঁওয়ে মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী, ঢাকায় মাহবুবুর রহমান, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বী, নারায়ণগঞ্জে চন্দন শীল, পাবনায় আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, পিরোজপুরে সালমা রহমান, বরগুনায় মো. জাহাঙ্গীর কবির, ভোলায় আবদুল মুমিন টুলু, বরিশালে এ কে এম জাহাঙ্গীর, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, মাদারীপুরে মুনীর চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, মৌলভীবাজারে মিছবাহুর রহমান, লক্ষ্মীপুরে মো. শাহজাহান, ফেনীতে খায়রুল বশর মজুমদার, লালমনিরহাটে মো. মতিয়ার রহমান, শরীয়তপুরে ছাবেদুর রহমান, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও সিলেটে মো. নাসির উদ্দীন খান।
দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হয় গত ২৩ আগস্ট। পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলার তপশিল ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় প্রণীত আইনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিয়োগ দিত সরকার। পরবর্তী সময়ে আইনটি কার্যকারিতা হারায়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ২০০০ সালে নতুন আইন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। এই আইনটিও ফের অকার্যকর থাকে। পরে নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় নিজ দলের নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় তারা। পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হলে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো দেশের ৬১ জেলায় নির্বাচন দেওয়া হয়। সে সময় ১৯ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
সূত্র:সমকাল |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |