‘আমার আম্মুকে এনে দে রে, আমি আম্মু কই পাব’
নিউজ ডেস্ক:
|
‘আমার আম্মুকে এনে দে রে, আমি আম্মু কই পাব। এতো খারাপভাবে আমার মাকে মারছে। আমার মাকে মেরে দিলো, আমার মাকে কই পাব।’ মুখে কসটেপ লাগানো, গলায় ওড়না পেঁচানো ও হাত বাঁধা অবস্থায় সাজেদা ইসলাম (৩২) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারের পর এভাবেই বিলাপ করছিল তার ছোট মেয়ে উম্মে আরিফা। এ সময় মেয়েটি তার সহপাঠীকে জড়িয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জয়পুরহাট জেলা শহরের জানিয়ার বাগান এলাকার একটি বাসার পঞ্চম তলা থেকে সাজেদা ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা ওই বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত সাজেদা ইসলাম পাঁচবিবি উপজেলার আয়ামারসূলপুর গ্রামের হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী। সাজেদার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার পদে সিলেটের একটি পেপার মিলে চাকরি করেন। সাজেদা তার ছোট মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী উম্মে আরিফাকে নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। তার বড় মেয়ে উম্মে হাবিবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিকেলে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মায়ের মরদেহ উদ্ধারের পর ছোট মেয়ে আহাজারি করছেন। সহপাঠী, আত্মীয়-স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সে সময় উম্মে আরিফা বিলাপ করতে করতে বলে, আমার মাকে কি ওরা ফেরত দেবে? আমার মায়ের মুখ বাঁধা, হাত বাঁধা, রক্ত বের করা। আমার মাকে কই পাবো? আমি কেন পরীক্ষা দিতে গেলাম, পরীক্ষা এক বছর ড্রপ যাইতো। আমার মাকে কই পাবো, আমার মাকে মেরে ফেলেছে। যারা মারছে তাদের ফাঁসি চাই। সে বলে, আমি পরীক্ষা দিয়ে রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করলাম। আমি ভাবছি আম্মু গোসল করছে। আব্বুকে কল দিলাম, বললাম আব্বু আমাকে এমবি তুলে দাও। আমি আরেক রুমে গেলাম চাচ্চু ভিডিও কল দিলো বললো মায়ের সঙ্গে কথা বলবে। আমি বললাম চাচ্চু আম্মুতো গোসল করতেছে, নামাজ পড়বে। আমি বাথরুমে গিয়ে দেখি আম্মু শুয়ে আছে, পরে দেখি আমার মা আর নেই। আরিফা আরও বলে, আমি দুজনের প্রতি সন্দেহ করছি, গতকাল একজন লোক কল দিছিল আর কাজের বুয়া (নীলা)। ৩-৪ দিন হলো নতুন কাজের বুয়া রাখা হয়েছে। আমি সকালে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় বলে গেলাম, আন্টি দরজা লাগান। আমি চলে গেছি, কিন্তু এসে দেখি দরজা লাগানো ছিল না। আমাদের বাসায় স্বর্ণ, টাকা-পয়সা যা ছিল সব নিয়ে গেছে। নিহতের আত্মীয় আব্দুল মতিন বলেন, আমার নাতনি (উম্মে আরিফা) পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত কাজের বুয়া বাসায় ছিল। পরে পরীক্ষা দিয়ে এসে মাকে না পেয়ে পোশাক চেঞ্জ করে গোসলখানায় গিয়ে দেখে মা শুয়ে আছে দুটো হাত বাঁধা ও মুখে টেপ মারা আবস্থায়। কাজের বুয়া পালিয়ে গেছে। ওই ভাড়া বাসার মালিক প্রকৌশলী রফিকুল আহসান বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে তারা এ বাসা ভাড়া নেয়। কয়েকদিন আগে কাজের বুয়া বাসায় রেখেছে, তা আমি জানি না। আজ তার ছোট মেয়ের কান্নাকাটি শুনে এসে ঘটনাটি জানতে পারি। জয়পুরহাট থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম সারোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজেদা ইসলামের মুখে কসটেপ লাগানো, পেছন থেকে হাত দুটো কসটেপ দিয়ে বাঁধা ও গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে হত্যা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সুস্পষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। কাজের বুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজা হচ্ছে, এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। স্বর্ণ ও টাকার বিষয়ে তিনি বলেন, নিহতের মেয়ে বলছে এসব বাসায় ছিল, তবে সেও শতভাগ শিওর না। তার মায়ের হেফাজতেই ছিল। কিছু থাকতে পারে বা তারা কিছু নিয়েও যেতে পারে।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |