শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হাতিরঝিল থানার যুবক এর আত্মহত্যার ফুটেজ নিয়ে সন্দেহ স্বজনদের
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: সোমবার, ২২ আগস্ট ২০২২, ০৫:২৬ বিকাল | অনলাইন সংস্করণ
হাতিরঝিল থানার যুবক এর আত্মহত্যার ফুটেজ নিয়ে সন্দেহ স্বজনদের

ছবি । সংগৃহীত

রাজধানীর হাতিরঝিল থানার হাজতে সুমন শেখ ওরফে রুম্মনের (২৭) মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সুমনকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে বাসা থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধারের যে খবর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তা নিয়েও ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এই টাকা উদ্ধার অভিযানের কোনো ভিডিও দেখাতে পারেনি পুলিশ।

শুক্রবার পুলিশ সুমনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার বিকালে পুলিশের পক্ষ থেকে সুমনের স্বজনদের জানানো হয়, সুমন থানার হাজতে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সুমন যে অফিসের ভ্যানচালক, রামপুরার সেই ইউনিলিভারের পানি ফিল্টারিং মেশিন ‘পিওরইট’-এর বিপণন অফিস থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি হয় গত ১৫ আগস্ট। সুমন ওই টাকা চুরিতে জড়িত বলে জানায় এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক। এরপর সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বাসা থেকে উদ্ধার হয় চুরি করা টাকা।’

পুলিশের এ অভিযোগ মানতে নারাজ সুমনের স্বজনরা। তার স্ত্রীর ভাবি রুমা আক্তার রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকা টাইমসের কাছে দাবি করেন, সুমনকে পুলিশ তাদের সামনেও নির্যাতন চালায়। এখন সুমনের মৃত্যু ধামাচাপা দিতে টাকা উদ্ধারের গল্প সাজিয়েছে।

রুমা আক্তার বলেন, ‘সুমনকে নিয়ে চারজন সাদা পোশাকে ও একজন পোশাক পরা পুলিশ সুমনের শাশুড়ির বাসায় আসে। তখন আশপাশের লোকজনও ছিল। পুলিশ টাকা বা অবৈধ কিছুই পায়নি বাসায়। এরপরও সুমনকে বেধড়ক পেটায় সবার সামনে। রাতে আরেকজন লোক এসে থানা থেকে এসেছে জানিয়ে ৫ লাখ টাকা ঘুষ চায়।’

কারা কেন পুলিশকে দিয়ে সুমনকে গ্রেপ্তার করল- এমন প্রশ্নের জবাবে রুমা আক্তার বলেন, ‘সুমন যে অফিসে চাকরি করত সেই অফিসের কিছু গোমর সে জেনে যায়। অফিসটিতে ইউনিলিভারের পিওরইট-এর মতো নকল পানি শোধনের (ফিল্টারিং) যন্ত্র গোপনে তৈরি করে তাতে পিওরইট মনোগ্রাম লাগিয়ে সরবরাহ করা হতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।’

সুমন এখান থেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা কয়েক দিন আগেই অফিস কর্তৃপক্ষকে জানায় বলে জানান রুমা আক্তার। বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে অন্যত্র চাকরি করবে বলে জানিয়ে দেয় সুমন। এতে ওই কোম্পানির লোকজন ক্ষিপ্ত হয় এবং গোমর ফাঁস হবে বলে ভয়ে পুলিশ দিয়ে সুমনকে গ্রেপ্তার করায় এবং নির্যাতন চালিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক ঢাকা টাইমসকে জানান, সুমন থানার হাজতে আত্মহত্যা করেছে, সিসি ক্যামেরার ভিডিও স্বজনদের দেখানো হয়েছে। তবে টাকা উদ্ধারের ভিডিও তার কাছে নেই বলে জানান তিনি।

যে প্রতিষ্ঠান মামলা করেছে তাদের সাথে সুমনের কোনো দ্বন্দ্ব আছে কি না সে বিষয়ে আজিমুল বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিবেন। ওই রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে মূল ঘটনা কী ঘটেছে।

সুমনের স্বজনরা বলছেন, শুক্রবার জুমার নামজের পর পুলিশ সুমনকে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান থেকে আটক করে পেটাতে পেটাতে পূর্ব রামপুরা হাইস্কুল গলিতে শাশুড়ির বাসায় নিয়ে যায়। এরপর সেখানে তল্লাশি চালায়। এ সময় উপস্থিত লোকজনের সামনে সুমনকে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। বাসায় কোনো টাকা বা অবৈধ কিছু না পেয়ে পুলিশ সুমনকে নিয়ে বেরিয়ে থানায় যায়।’

সুমনের লাশ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গ থেকে গ্রহণ করার বিষয়ে সুমনের স্ত্রী জান্নাত আক্তার রোববার রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘কীভাবে যে লাশ নিব তাই তো বুঝতে পারতেছি না। কোথাও বিচার পেলাম না। আমরা পুলিশের ভয়ে আছি, আতঙ্কে আছি। আমাদের বাড়ির আশপাশে সাদা পোশাকের পুলিশ ঘোরাঘুরি করে।’ পুলিশ বিভিন্নভাবে ভয় দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

জান্নাত আক্তার ঢাকা টাইমসকে আরো বলেন, ‘আমার স্বামীকে নির্যাতন করেছে পুলিশ। এখন আবার আমার বাসায় চোরাই টাকা পাওয়ার গল্প বানিয়েছে। আমি আদালতে গিয়েছিলাম বিচারের জন্য, বিচার পেলাম না।’

এদিকে সুমনের ভাড়া বাসার মালিক ফারুক হোসেনের সঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয় ঢাকা টাইমসের। তিনি জানান, ‘আমাদের বাসায় পুলিশ কোনো অভিযান চালায়নি।’

এদিকে ইউনিলিভারের বিপণন অফিস থেকে টাকা চুরির যে ভিডিওর কথা বলছে পুলিশ, তাতে সুমনকে টাকা চুরি করে নিতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে উপকমিশনার আজিমুল হক বলেন, সুমন রেইনকোট ও মাথায় হেলমেট পরা ছিল। রাতে সে ওই অফিসে ঢোকে। একপর্যায়ে ক্যাশিয়ারের কক্ষ থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। ওই কক্ষে ঢোকার আগেই সুমন ও তার সঙ্গীরা সিসি ক্যামেরা অকার্যকর করে। ফলে টাকা চুরির সরাসরি দৃশ্য দেখা যায়নি ভিডিওতে। ওই রেইন কোট বা হেলমেট পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি বলে জানান তিনি।

নিহত সুমনের বাড়ি নবাবগঞ্জের দক্ষিণকান্দি এলাকায়। তার বাবার নাম পেয়ার আলী। সুমনের ৬ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানসহ সুমন পূর্ব রামপুরায় বাস করছিলেন। ১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছিলেন ইউনিলিভারের ওই বিপণন অফিসে। সুমনের মা মারা গিয়েছে এক বছর আগে। এরপর থেকে সুমনের বাবা একাই পশ্চিম রামপুরা মহানগর প্রজেক্ট সংলগ্ন ঝিলকাননে একটি রুম ভাড়া নিয়ে বাস করছিলেন। ওই মহানগর প্রজেক্টেই মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান চলাকালে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুমনকে। শনিবার সকালে সুমন শেখকে আদালতে পাঠানোর কথা ছিল জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল জানান, ‘কিন্তু রাত ৩টা ৩২ মিনিটে সুমন তার পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয়। সিসিটিভি ফুটেজে সেটা দেখা গেছে। সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে হাতিরঝিল থানার দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) আব্দুল কুদ্দুস জানান, ‘ঘটনার রাত ১২টা পর্যন্ত হাজতে সুমন ছাড়াও আরো কয়েকজন আসামি ছিল। তবে ১২টার পর তাদের অন্য কক্ষে রাখা হয়। সে সময় সুমন একাই হাজতে ছিলেন।’ অন্য আসামিদের কেন অন্যত্র নেওয়া হয়েছিল কিংবা কোথায় নেওয়া হয়েছিল সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি পুলিশ।

 

নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা

 

« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ