হত্যার পর পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দেওয়া হয় নুরুজ্জামানকে, দাবি চাচার
নিউজ ডেস্ক:
|
জাতীয় শোক দিবসে পদ্মা সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়া যুবকের সন্ধান এক দিন পরেও পাওয়া যায়নি। সোমবার দুপুরে তিনি সেতু থেকে পদ্মায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন। সেতুতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তিনি মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওতে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে না পারার ক্ষোভের কথা বলেছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন নুরুজ্জামান। এমনকি তাহাজ্জুদের নামাজও তিনি পড়তেন। নুরুজ্জামান সবাইকে বোঝাতেন, আত্মহত্যা মহাপাপ। সেই নুরুজ্জামান কীভাবে আত্মহত্যা করলেন। যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। কথাগুলো কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে না পেরে ক্ষোভে পদ্মা সেতু থেকে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া নুরুজ্জামানের চাচা আব্দুল হান্নান। নুরুজ্জামান ময়মনসিংহের গৌরীপুরের চুড়ালি গ্রামের আব্দুল খালেক ও হেলেনা দম্পতির ছেলে। তারা চার ভাই ও তিন বোন। তিনি গত ২০ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে আসছেন। সেখানেই সফুরা আক্তার নামে একজনকে বিয়ে করেন। তিনিও গার্মেন্টস শ্রমিক। তারা দুই সন্তান নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন। চাচা আব্দুল হান্নান বলেন, ভিডিওটা দেখলেই বোঝা যায় যে তাকে মেরে পদ্মা সেতু থেকে ফেলা হয়েছে। পড়ার পর কিন্তু গাড়ি থেকে কেউ বের হয়নি। এতেই স্পষ্ট যে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া, একটা মানুষ লাফ দিলে যেভাবে পড়ে, নুরুজ্জামান সেভাবে পড়েনি। মনে হয়েছে যেন একটি মূর্তি ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা তার মরদেহটা চাই ও হত্যাকারীদের বিচার চাই। নুরুজ্জামানের বোন ময়না বলেন, আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। অন্য মানুষকে বলতো, আত্মহত্যা মহাপাপ। সেই মানুষ আবার কীভাবে আত্মহত্যা করে! আমার ভাইকে খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মা হেলেনা বেগম বলেন, নুরুজ্জামানের বউ, তার বোন, দুলাভাই ও ছেলেকে নিয়ে আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। জমি নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝামেলা ছিল। তাই, আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। আমি বিচার চাই। এদিকে, মোজাম্মেলের সঙ্গে থাকা ফারুকের আত্মীয়রা তাকে ছাড়িয়ে আনতে যান। তবে পুলিশ তাকে ছাড়েনি। এসব করতে করতেই রাত হয়ে যায়। পরে ফেরার সময় আমার ভাবি, দুই ভাতিজিকে খোঁজে পাই না। তারা ফারুকের আত্মীয়দের সঙ্গে আমাকে ফেলে রেখেই চলে আসে। এ অবস্থায় আমি ভাবিকে ফোন দিয়ে বলি আমি সবার নামে মামলা করবো। পরে ভাবি ওই গাড়ি থেকে নেমে দুই ভাতিজিকে নিয়ে আমার সঙ্গে আসে।’ তিনি আরও বলেন, জমি নিয়ে ভাবির বোন, দুলাভাই ও তার ছেলে মোজাম্মেলের ঝামেলা চলছিল। ছয় লাখ টাকায় দুই কাঠা জমি আমার ভাই নুরুজ্জামানকে লিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লিখে দেয়নি। এসব নিয়েই তাদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের কারণেই তারা আমার ভাইকে মেরে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়েছে। আমরা চাই, সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক। সোমবার (১৫ আগস্ট) ভোরে নুরুজ্জামান ওমর ফারুক নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যান। কিন্তু কবর জিয়ারত ও ফুল দেওয়ার জন্য অনুমতি না থাকায় সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পদ্মা সেতু দিয়ে ফেরার পথে চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে ঝাঁপ দেন তিনি। এরপর থেকে তিনি নিঁখোজ।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |