সার্জন না হয়ে ও করলেন সার্জারি
নিউজ ডেস্ক:
|
অগ্নাশয়ের সিস্ট অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর রক্তনালী কেটে ফেলেছেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. সামসুল আরেফিন, যিনি সার্জারির চিকিৎসকই নন। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, রক্তপাত বন্ধের কোনো ব্যবস্থা না করেই তাকে আইসিইউতে পাঠিয়ে লাপাত্তা হন এ চিকিৎসক। পরে আরেক চিকিৎসকের অপারেশনে কোনোক্রমে প্রাণ বাঁচানো গেলেও একেবারে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ভুল চিকিৎসার সব প্রমাণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে ঘুরে ফিরছেন রোগীর বাবা আর শ্বশুর। ডা. আরেফিনের লাইসেন্স বাতিল চেয়ে মামলাও করবেন তারা। ভুল চিকিৎসার প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য ভবনে যান মেহবিশ জাহানের বাবা আর শ্বশুর। মহাপরিচালকের কাছে তাদের অভিযোগ, অগ্নাশয়ের একটি সিস্ট অপারেশন করতে গিয়ে তাদের মেয়ের রক্তনালী কেটে ফেলেছেন ডা. সামসুল আরেফিন। সাথে সংযুক্ত ছিল বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালেরই প্রমাণপত্র। রোগীর শ্বশুর আরকানউল্লাহ শ্যামল বলেন- পেশেন্টের আর্টারি কাটা হয়ে গেছে, ব্লিডিং হচ্ছে। তার ব্লাড প্রেশার বর্তমানে ৫ এবং বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ১%। রোগীর বাবা শেখ জসিম উদ্দিন বলেন, উনি সার্জন না হয়েও উনি কেনো অপারেশন করতে গেলেন। এমনকি উনি ওনার টিমে কোনো সার্জনও রাখেননি। উনি কেনো এটা করতে গেলেন? জানা গেছে, গত ৯ আগস্ট অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় মেহবিশ জাহানকে। অ্যান্ডোসকপির মাধ্যমে অগ্নাশয়ের সিস্ট অপসারণের কথা, লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট। পেরিয়ে যায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা, কোনো খবর নেই। হঠাৎ বলা হয় রোগীর অবস্থা শেষের দিকে, বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ১ ভাগ। কি এমন হয়েছিল অপারেশন থিয়েটারে? রোগীর বাবা শেখ জসিম উদ্দিন বললেন, উনি ওভার কনফিডেন্ট হয়ে মনিটরে না তাকিয়ে পুশ করেছেন। এটা করতে গিয়ে সেখানে যে আর্টারি ছিল সেটি উনি খেয়াল করেননি। রোগীর শ্বশুর আরকানউল্লাহ শ্যামল বলেন, শুরুতেই উনি ভুলটা করেছেন। তারপর ৩ ঘণ্টা গাফিলতি করে রোগীকে মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলেছেন। ওই ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না ডা. আরেফিন। ফোনেও পাওয়া যায়নি তাকে। যেহেতু অভিযোগ হাসপাতালের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই, তাই সব প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন হাসপাতাল ম্যানেজার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিন বলেন, রোগীর অভিভাবকরা সকালে এসে কথা বলে গেছেন। অভিযোগ তুলে নেয়া হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না অভিযোগ তুলে নেয়া বিষয় না। তারা আমাদের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে গেছেন। এদিকে রোগীর বাবা শেখ জসিম উদ্দিন জানালেন, আমারে ওনারা বলছে যে সাতদিন অপেক্ষা করেন আর মিডিয়ার সাথে কথা বলিয়েন না।অপরদিকে, বেঁচে থাকার ন্যূনতম সম্ভাবনা নিয়ে বিছানায় মেহবিশ জাহান। দেড় বছর হলো বিয়ে হয়েছিল তার, এখন ডাক্তারের অ্যাপ্রোনে কাউকে দেখলেই আঁতকে উঠছে সে মেহবিশ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেহবিশের বাবা শেখ জসিম উদ্দিন বলেন, আমি মনের দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল একজন মানুষ। আমার মেয়েটা আমাকে সাহস যোগাতো সবসময়। সেই মেয়েটা আমার চাইতেও দুর্বল হয়ে গেছে। আমি করজোড়ে সবার কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। মেডিকেল কাউন্সিলেও ভুল চিকিৎসার লিখিত ওই অভিযোগ জানিয়েছেন মেহবিশের বাবা। দোষী চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চান তিনি।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |