যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ প্রয়োজনঃ গবেষণা
নিউজ ডেস্ক:
|
বাংলাদেশে কার্যকরভাবে যক্ষ্মা মোকাবেলায় স্ক্রিনিং এবং কেস ফলোআপ, ভার্চুয়াল কেয়ার ও ডিজিটাল স্বাস্থ্য, কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের প্রশিক্ষণের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়াসহ বহুমুখী পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এসেছে ফেলোদের গবেষণায়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) কার্যক্রম আয়োজিত যক্ষ্মাবিষয়ক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ফেলোগণ তাঁদের প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরেন। শুরুতে বিএসএমএমইউর ডা. আজিজুর রহমান শারাক (এমবিবিএস, এমপিএইচ) ঢাকায় বসবাসকারী ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ঔষধ সংবেদনশীল এবং ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাবের উপর তাঁর গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। নভেম্বর ২০২০ থেকে অক্টোবর ২০২১ সালের মধ্যে পরিচালিত এই ক্রস-সেকশনাল পদ্ধতির গবেষণায় তিনি ঢাকায় ৯৩ জন ঔষধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর পরিবারের মোট ৩৫৫ জন সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাঁর গবেষণায় পাওয়া যায়, ৯.৯% পরিবারের সদস্যদের যক্ষ্মা লক্ষণ ছিল এবং পরবর্তীকালে ৬.৭% জনের যক্ষ্মা ধরা পড়ে। উল্লেখ্য যে, ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর পরিবারের ১৭৮ জন সদস্যকে স্ক্রিনিং করে একজন যক্ষ্মা রোগী পাওয়া গেছে। বিএসএমএমইউর ডা. ফারিহা আলম মিহিকা (এমবিবিএস, এমপিএইচ) ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকায় ফুসফুসীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ পরিষেবার উপর কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব বিষয়ক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ও যক্ষ্মা রোগীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়সীমার মধ্যে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একটি ক্রস-সেকশনাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণায় দেখা যায় যে, কোভিড-১৯ এর কারণে যক্ষ্মা স্ক্রিনিং উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয় (১৬-৩৫%)। সেবাগ্রহীতারা লকডাউনের কারণে সৃষ্ট পরিবহন সংকট (৯৫%) এবং কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার ঝুঁকির বিষয়কে প্রধানতম সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবাদানকারীর অভাব, কাজের চাপ বৃদ্ধি এবং কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়গুলো স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। ঢাকায় শিশু যক্ষ্মা সনাক্তকরণের প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে গবেষণা করেন নিপসমের ডা. মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন (এমবিবিএস,এমপিএইচ)। একটি কোয়ালিটিটিভ গবেষণায় তিনি যক্ষ্মা আক্রান্ত শিশু, তাদের পিতামাতা এবং স্বাস্থ্যসেবাদানকারী সবমিলিয়ে ৩২ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক ও প্রচলিত স্টিগমা, ভুল ধারণা এবং শিশু যক্ষ্মা সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, অপ্রতুল কন্ট্যাক্ট ইনভেস্টিগেশন, রোগ নির্ণয়ে সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবাদানকারী এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা শিশু যক্ষ্মা সনাক্তকরণের বাধাগুলোর মধ্যে অন্যতম। নিপসমের ডা. মমতাজ বেগম (এমপিএইচ) স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং রোগীদের মাঝে ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বিষয়ক জ্ঞান ও মনোভাব সম্পর্কিত গবেষণা উপস্থাপন করেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়সীমার মধ্যে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একটি ক্রস-সেকশনাল গবেষণা সম্পন্ন করেন তিনি। এই গবেষণায় তিনি ২৩২ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যার মধ্যে ১০১ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও ১৩১ জন রোগী। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৯৩% চিকিৎসক ঔষধ প্রতিরোধী। যক্ষ্মা বিষয়টি সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখেন। আর প্রায় ৬৯% নার্স এবং ৮২% রোগী এই বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত এসিটিবি ফেলোশিপ উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং গবেষকদের তাদের প্রচেষ্টার জন্য সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যক্ষার সংক্রমণ অনেকটা কমে এসেছে। কিন্তু কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি যখন নিয়মিত ওষুধ না খেয়ে মাঝপথে ছেড়ে দেন, তখন আরও বেশি সমস্যা হয়। এর বিস্তার রোধ করা না গেলে মুক্তি সম্ভব নয়। ২০৩৫ সালে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণও অনেকটা অসম্ভব হয়ে যাবে। কঠিন হবে এসডিজি অর্জনও। যক্ষার সংক্রমণ পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসায় স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বাড়ছে। যারা যক্ষ্মা নিয়ে গবেষণা করছেন তাদেরও এর সংক্রমণ ও নিরাময় নিয়ে আরও গভীরে যেতে হবে। এর বিস্তার রোধের সঠিক উপায় অনুসন্ধান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মিরান্ডা বেকমেন বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অনেক উন্নতি ঘটেছে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ও মৃত্যু কমেছে। তবে এখনো প্রতিদিন ১২০ জনের মত যক্ষ্মারোগী প্রাণ হারাচ্ছেন। ডায়াগনেসিস ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে এ পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে। ডা. তাহমিদ আহমেদ ফেলোদের কাজের প্রশংসা করেন এবং তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপর গুরুত্বারোপ করেন। আইসিডিআর,বি পরিচালিত ইউএসএআইডি'স এসিটিবি, বিএসএমএমইউ এবং নিপসম-এর সমন্বিত উদ্যোগে চারজন স্নাতকোত্তর চিকিৎসক/শিক্ষার্থীদের যক্ষ্মা বিষয়ক গবেষণা বা থিসিস সম্পন্নের জন্য এই ফেলোশিপ প্রদান করা হয়। এই উদ্যোগটি যক্ষ্মা সম্পর্কিত গবেষণার জন্য নতুন প্রজন্মের গবেষকদের একটি অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি,ইউএসএআইডি, বিএসএমএমইউ, নিপসম, গণমাধ্যম, আইসিডিডিআরবি এবং বাংলাদেশে যক্ষ্মা নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |