শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ময়মনসিংহে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণে দুই নারী শ্রমিক নিহত
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৩০ বিকাল | অনলাইন সংস্করণ

ময়মনসিংহের নান্দাইলের পল্লীতে আতশবাজি তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে পাঁচজন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ছাড়াও জেলা শহরে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশহাটি গ্রামে। ঘটনার পর থেকেই বাড়ির মালিক ছাড়াও গ্রামের অনেকেই পলাতক।

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই বাড়িটি স্থানীয় চাঁন মিয়ার ছেলে মো. বোরহান উদ্দিনের। আধাপাকা বাড়িটিতে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে নির্বিঘ্নে আতশবাজি তৈরি করা হচ্ছিল। গ্রামের ভেতরে হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। প্রায় ৫০ জন শ্রমিক পালাক্রমে ওই কারখানায় কাজ করতেন। দেশে জঙ্গিবাদের ঘটনার পরপরই বোরহান অতি গোপনে কারখানাটি চালিয়ে আসছিল। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন যানবাহন ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো আতশবাজি।

প্রতিবেশীরা জানায়, বুধবার ভোরে হালকা ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়। ওই সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। পরে গিয়ে দেখতে পায় পাশেই বোরহানের কারখানার ওপরের টিন উড়ে গেছে এবং দেয়াল ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে আধাপাকা ঘরটির টিনের চাল ছাড়াও দেয়ালের ইট চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে উড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঘরের মেঝেতে বড় গর্ত হয়। এ সময় ভেতরে থাকা দুই নারী শ্রমিকের দেহের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে ঘটনাস্থল থেকে ২ থেকে ৩ শ মিটার দূরে।

নিহত নারী দুজন হচ্ছেন- পাশের বারই গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৩০) ও বাঁশহাটি গ্রামের আব্দুল গনির স্ত্রী মোসা. আফিলা বেগম (২৮)। তাদের স্বজনরা জানান, প্রতিদিনের মতো সাহরি খেয়ে ওই দুজন কাজ করার জন্য কারখানায় যায়। যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মৃতদের দেহের বিভিন্ন অংশ বাড়ির বাইরে পড়ে রয়েছে। আতশবাজির ঝাঁঝাল গন্ধ ছাড়াও লাশের পোড়া গন্ধও চারদিক। পাশের বাঁশঝাড়ের ওপরে ও ধান ক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঘরের টিন, ইট ছাড়াও আসবাবপত্র। বিস্ফোরণের সময় পাশের ঘরের ঘুমন্ত লোকজনও আহত হয়। এ বিস্ফোরণে প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা কেঁপে ওঠে এবং বেশ কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিস্ফোরণের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। ঘটনার পরই স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই নারীর দেহের অংশ উদ্ধার করে বডি ব্যাগে করে নিয়ে যায়।

প্রতিবেশীরা জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরে এই বাড়ি ছাড়াও বোরহানের ভাই ফখর উদ্দিন, শাহাজাহান ও হেলিম এ ধরনের আতশবাজির আড়ালে বোমা তৈরি করত। আর তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভৈরব ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো। আতশবাজি তৈরির সময় এক ধরনের গন্ধে পরিবেশ নষ্ট হলেও বোরহানের প্রভাবের কারণে কেউ মূখ খুলত না। প্রতিবেশীরা অভিযোগ করে, অবৈধ এই কারখানায় সকল ধরনের কর্মকাণ্ড হতো স্থানীয় একটি চক্রকে ম্যানেজ করে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) ছাড়াও ডিবি, এনএসআই ও পিবিআইসহ অনেক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতদস্যরা।

পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে পটকা তৈরির বারুদ থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এখানে এই কারখানা কিভাবে এতদিন চলত।

« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ