মিয়ানমারের মর্টার শেলে ১ জন যুবক নিহত ও আহত ৫ জন
নিউজ ডেস্ক:
|
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে ইকবাল নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন। ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইকবাল ও আহতরা তুমব্রু সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডের বাসিন্দা। রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ ও স্থানীয়রা জানান, রাত ৮টার দিকে হঠাৎ মর্টার শেল আঘাত হানে। পর পর তিনটি মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়। এই ঘটনায় ইকবালসহ ছয়জন আহত হন। তাদের উখিয়ার কুতুপালং হাসপাতালে নিয়ে গেলে ইকবাল মারা যান। অন্যদের সেই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে আজ শুক্রবার দুপুরে একই সীমান্তে ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি নাগরিক আহত হন। তুমব্রু হেডম্যান পাড়ার ৩৫নং পিলারের ৩০০ মিটার মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে। আহত অন্নথাইং তঞ্চঙ্গ্যা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা। বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন: মিয়ানমার বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করলেও ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। বলা হচ্ছে, দেশটির অভ্যন্তরীণ যুদ্ধপরিস্থিতির ফলেই এসব ঘটছে। তবে তাতে আতঙ্ক কাটছে না বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এপারে।গোলাগুলির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এপারের জনবসতিতে বিরাজ করছে আতঙ্ক। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপে একাধিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাবে না হয়তো। বিশেষ করে উত্তর রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ব্যাপক সেনা অভিযান চালাচ্ছে। তারই গোলা এসে পড়ছে এপারে। তবে ভিন্ন উদ্দেশ্যের বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। কেননা, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর নামে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির পর ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা সব মিলিয়ে ১২ লাখের মতো। মিয়ানমারে আরও যে ৬ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, তাদের বাংলাদেশ ও ভারতে ঢুকতে বাধ্য করার জন্য ফাঁদও হতে পারে সীমান্তের এই সাম্প্রতিক উত্তেজনা, এমন শঙ্কাও দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার অতীতে চীন ও থাইল্যান্ডের আকাশসীমাও লঙ্ঘন করেছে। তবে তারা ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশের পর আর পুনরাবৃত্তি ঘটায়নি। কিন্তু বাংলাদেশে পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সীমান্তে বাংলাদেশের আরও কড়াকড়ি আরোপ, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধিসহ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নেওয়ার বিকল্প নেই। বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপনেরও পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, এবার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে যুদ্ধাবস্থা চলছে তার ধরনটা ভিন্ন। সেখানে শুধু রোহিঙ্গাদেরই টার্গেট করা হয়নি। ওই দেশের অন্য শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপরও হামলা হচ্ছে। যারা পালাচ্ছে, তারা কিন্তু ভারতমুখী হচ্ছে। বাংলাদেশ ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে উল্লেখ করে এই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গোলা পড়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রশ্ন আসতে পারে যে, বাংলাদেশ কেন সামরিক জবাব দিচ্ছে না। আমি মনে করি, সামরিক জবাবের জন্য যেসব উপাদান থাকা দরকার তা ওই ঘটনায় হয়তো নেই। কারণ শেল বাংলাদেশে পড়ছে ঠিকই, তবে লক্ষ্যবস্তু বাংলাদেশ নয়। এমন পরিস্থিতিতে কঠিন কোনো সামরিক জবাব দেওয়া উৎকৃষ্ট হবে না।’ যেহেতু মিয়ানমার বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কূটনীতি আরও জোরদার করতে পারে বলে মন্তব্য করেন মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ। বলেন, ‘শেল যেখান থেকে আসছে ওই সীমান্তে ধৈর্য সহকারে সামরিক পাওয়ার ডিসপ্লে বা সম্মেলন ঘটাতে পারে। বাংলাদেশ রেসপন্ড (জবাব) করতে পারে। এটাও একটি মিলিটারি টার্ম। এছাড়া গোয়েন্দা তৎপরতা আরও সক্রিয় করা যেতে পারে।’ ‘আরেকটি বিষয় হলো- ওই শেল মিয়ামারের সরকারি বাহিনী ছুড়েছে, নাকি বিদ্রোহীরা ছুড়েছে সেটা দেখার বিষয় নয়। যে-ই ছুড়ুক, শেল তো মিয়ানমার থেকে এসেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শেল বা গুলি যেখান থেকে ছোড়া হয়েছে সেই উৎসস্থল ধ্বংসে বাংলাদেশ চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে।’ বলেন তিনি। মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যেহেতু বারবার মিয়ানমার একই ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেক্ষেত্রে এটি এখন আন্তর্জাতিক ফোরামে ওঠানো দরকার। আশা করি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করবেন।’ এটি মিয়ানমারের কোনো ফাঁদ কি না, জানতে চাইলে ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘ট্র্যাপ (ফাঁদ) হতে পারে। সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেননা, জীবন হুমকিতে পড়লে তো রোহিঙ্গারা পালাবেই। আর পালালে তারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করবে। মিয়ামারের উদ্দেশ্য কী তা পরিষ্কার হতে আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয় নিয়ে বাংলাদেশকে কথা বলতে হবে।’ সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |