রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মাতৃ স্তন্যদানের ক্ষেত্রে কি কি করনীয়
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট ২০২২, ০৪:০১ সকাল | অনলাইন সংস্করণ

মায়ের বুকের দুধ শিশুদের জন্য প্রকৃতির পক্ষ থেকে বিস্ময়কর, অদ্ভুত এক উপহার। শিশুদের স্তন্যদানের ক্ষেত্রে মায়েরা প্রায়ই কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এখানে সে বিষয়গুলোর সামান্য সমাধান দেয়া হলো। কিভাবে বুঝব বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণ বুকের দুধ পাচ্ছে? অনেক মায়েরাই দুশ্চিন্তার মাঝে থাকেন এই ভেবে যে, তাদের বাচ্চা বুঝি বা পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে না। এমন দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।এমন চিন্তা মাথায় এলে বাচ্চার ওজন দিন। সপ্তাহান্তে ওজন যদি কাক্সিক্ষত মানে বাড়তে থাকে, তাহলে ঘাবড়ানোর দরকার নেই। মনে রাখতে হবে, কাক্সিক্ষত মানে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার মানেই হচ্ছে বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে।

বাচ্চাকে কি রাতেও দুধ খাওয়াতে হবে? রাতের বেলায় ক্ষুধার কারণে বাচ্চারা জেগে ওঠে। প্রথম কয়েক সপ্তাহ বাচ্চা রাতের বেলায় ঘন ঘন দুধ গ্রহণ করে। ঘুমের ভেতর মায়ের হাত কিংবা দেহের চাপ বাচ্চার ওপর লাগতে পারে। এতে খুব অসুবিধা নেই। বাচ্চা মায়ের স্পর্শ, উষ্ণতা, ঘ্রাণ এগুলো দারুণভাবে উপভোগ করে। অনেক সময় বাচ্চা ঘুমানোর আগেই মা ঘুমিয়ে পড়েন।

এমনও দেখা গেছে, বাচ্চা রাত জেগে মায়ের ঘুম না ভাঙিয়ে দুধ খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। কত বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে? পুরো দুই বছর। তবে ৪-৫ মাস বয়স থেকে বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য পারিবারিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পাঁচ মাস বয়সের পর শুধু মায়ের বুকের দুধে বাচ্চার পুরো চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে বুকের দুধ পারিবারিক অন্যান্য খাবারের উৎকর্ষতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। সেজন্য অন্যান্য খাবার গ্রহণের পাশাপাশি অবশ্যই বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে হবে।

কখন থেকে দুধ বন্ধ করতে হবে? চার পাঁচ মাস বয়স থেকে আস্তে আস্তে বুকের দুধ তুলতে শুরু করতে হবে। এ সময় ফলের রস, সুজি, পায়েস, বিশেষ খিচুড়ি, ডিম ইত্যাদি খাদ্য আস্তে ধীরে মুখে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তড়িঘড়ি করে বুকের দুধ ছাড়ানো একেবারে ঠিক নয়। মা গর্ভবতী হয়ে পড়লে কি বুকের দুধ বন্ধ করতে হবে? এমনটি করার কোন প্রয়োজন নেই।

গর্ভকালীন সময় বুকের দুধ কমে যেতে পারে কিন্তু দুধের গুণগত মানে কোন ঘাটতি দেখা দেয় না কিংবা বুকের দুধ গ্রহণের ফলে গর্ভের কোন ক্ষতি হয় না।সেজন্য গর্ভবতী মায়েরা নিশ্চিন্তে বুকের দুধ দিতে পারেন। তবে বুকের দুধ খাওয়াতে হলে অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান গ্রহণ করতে হবে। তবে কেনই বা বাচ্চা বুকের দুধ গ্রহণ করা কালে সন্তান নেবেন। এত ঘন ঘন সন্তান গ্রহণ মায়ের ও বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কখন কখন মারাত্মক।কর্মজীবী মায়েরা বাচ্চাদের বিষয়ে কি করবেন? যদি মা অল্প সময়ের জন্য বাইরে যান, তবে বেরনোর ঠিক আগের মুহূর্তে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। আর যদি বেশি সময়ের জন্য বাইরে বের হতে হয়, তবে বাচ্চাকে পারলে সঙ্গে নিয়ে বেরনো ভাল। মনে রাখা দরকার, যে কোন স্থানে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানো যায়। বাচ্চাকে যদি সঙ্গে নেয়া সম্ভব না হয়, তবে এমন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে রেখে যাওয়া দরকার, যে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারবে।আর যদি অন্য কোন স্তন্যদাত্রী পাওয়া যায়, তবে তার কাছে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য রাখা উত্তম। নতুবা মায়ের শেখানো পদ্ধতিতে দাদি বা নানি অথবা অন্য কেউ বাচ্চাকে খাবার তৈরি করে উপহার দিতে পারেন। তাছাড়া প্রায় দেশে প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে ছুটি নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ছুটিছাঁটার ছয় মাস স্তন্যদানের জন্য যথেষ্ট।

মাঝে মাঝে বোতলে করে কি দুধ দেয়া উচিত? মোটেও না। বোতলের ভিতরে জীবাণু গুটিসুটি মেরে বসে থাকে। বোতলে করে দুধ কিংবা পানি দেয়া মনে রাখবেন বিপজ্জনক। সুতরাং আপনার বাসায় যদি বাচ্চাকে খাওয়ানোর বোতল থাকে, তবে তা ছুড়ে ফেলে দিন। অনেকেই বলেন, গরম পানি আর সাবান মিশিয়ে বোতল ধোলাই করলে এর মাঝে জীবাণু আসবে কোথা থেকে। এমন যুক্তি অবশ্য অকাট্য।

কিন্তু তারপর সব সময় নিখুঁতভাবে গরম পানি দিয়ে জীবাণু মুক্ত করা সম্ভব না। সেজন্য বাচ্চাকে যদি অতিরিক্ত গরু দুধ কিংবা গরুর দুধ খাওয়াতেই হয়, তবে পেয়ালায় দুধ চামচ দিয়ে খাওয়ান। পেয়ালা ও চামচ অতি সহজে জীবাণু মুক্ত করা যায় কিন্তু বোতল জীবাণু মুক্ত করা খুবই কঠিন।

বুকের দুধ দেয়ার সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি কি খাওয়া উচিত? জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি বুকের দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়। সে জন্য মিনি পিল স্তন্যদানের সময় গ্রহণ করা উচিত নয়। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এ সময় বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এখানে স্তন্যদানের ক্ষেত্রে যে সমস্ত প্রশ্নের সম্মুখীন মায়েরা কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীরা হতে পারেন, তারই উত্তর দেয়া হলো। এর বাইরেও মায়েদের জানার অনেক কিছু থাকতে পারে, এজন্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া ভাল।

লেখক:  মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট

 

নিউজ ডেস্ক| দৈনিক আজবাংলা

 

« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ