পাকিস্তানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১২৯০ জন। ২৪ ঘণ্টায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় দুর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ। বন্যায় সবেচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সোয়াত এলাকায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। দুর্গত এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ায় বাড়ছে উদ্বেগ।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা। ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতালসহ সবকিছুই তলিয়ে গেছে পানিতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সিন্ধু ও দক্ষিণ পাঞ্জাবের বেশ কিছু জেলা। স্যাটালাইট ছবিতেও ধরা পড়েছে ভয়াবহতা।
বন্যায় গৃহহীন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন শিবিরে। এদিকে, জরুরি ত্রাণের জন্য মরিয়া সোয়াত উপত্যকার বাসিন্দারা। বন্যায় একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শহরটি। সেখানে ত্রাণ পৌঁছাতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা। মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।
বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানের এক বাসিন্দা জানান, ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত সবাই। আমার ১১৫ থেকে ১২০ বছরের জীবনে এমন অবস্থা আগে দেখিনি। অন্য এক বাসিন্দা বলেন, এখানে এতো এতো মানুষ হাহাকার করছে। কিন্তু যে পরিমাণ ত্রাণ এসেছে তা খুবই কম। বন্যার পর এখন না খেয়ে মারা যাবে অনেক মানুষ।
বন্যাদুর্গতদের মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ অন্তঃসত্তা নারীও রয়েছেন। জাতিসংঘ বলছে, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৩ হাজারের বেশি নারীর আগামী মাসে সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও ওষুধ প্রয়োজন।
এরইমধ্যে সিন্ধু প্রদেশে এক হাজারের বেশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সংকট আরও বাড়ছে।
এদিকে, ডায়রিয়া চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন দুর্গতরা। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, নারী ও বয়স্করা।
পাকিস্তানের মার্সি কর্পসের পরিচালক ফারাহ নৌরিন বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বাড়ছে। চর্মরোগ, চোখের সংক্রমণের মতো পানিবাহিনী রোগ বাড়ছে। শিগগিরই একে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। অস্থায়ী চিকিৎসা সেবা চালু করতে স্থানীয় থেকে মানবিক কর্মী এবং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে, ১৬ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এরই মধ্যে এগিয়ে এসেছে চীন, সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উজবেকিস্তান।
এদিকে, পাকিস্তানের বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির বিষয়ে বিশ্বের জন্য সতর্ক বার্তা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু দরিদ্র দেশ নয়, রেকর্ড বৃষ্টিতে যেকোনো দেশ বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে- বলছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা