পাকা তালে আছে ক্যানসার প্রতিরোধক
নিউজ ডেস্ক:
|
আবহমান বাংলার এক পায়ে দাঁড়ানো তালগাছ থেকে পাকা তালের মৌ মৌ গন্ধ মাতোয়ারা করে তোলে। ভাদ্র মাসে পিঠাপ্রেমী বাঙালির রসনা বিলাসে মৌসুমী ফল পাকা তালের জুড়ি নেই। এই সময়ে পাকা তালের ক্বাথ দিয়ে নানা রকম সুস্বাদু পিঠা-পায়েস তৈরি হয় বাঙালির ঘরে ঘরে। কচি অবস্থায় তালের বীজও খাওয়া হয়, যা তালশাঁস নামে পরিচিত। তালগাছের কাণ্ড থেকে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে পায়েস, গুড়, পাটালি, চিনি, মিছরি, ভিনেগার ইত্যাদি তৈরি হয়। তালগাছ শাখাপ্রশাখাহীন একবীজ পত্রী উদ্ভিদ। তাল উদ্ভিদ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে গাছকে রক্ষা ও ভূমির ক্ষয় রোধ করে। বহুকাল আগে এই দেশে তার আগমন। বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন বোরাসুস ফ্লাবেলিয়ার। খুবই ধীরে বাড়ে। ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে।’আকাশে উঁকি মারা তালগাছ প্রায় উচ্চতা ৩০-৬০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার রং সবুজ, দেখতে বড় পাখার মত। পাতার সংখ্যা ৫০-৬০টি পর্যন্ত হয়। অন্যান্য গাছের তুলনায় তালের পাতা আকারে বড়। দেশের সর্বত্রই কম বেশি এ গাছ জন্মে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম, বরেন্দ্র অঞ্চল, ভাওয়াল গড় ও লালমাই পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে এ গাছ জন্মে থাকে। লোকজ চিকিৎসায় তালের ব্যবহার প্রচুর। কচি গাছ পিত্তাধিক্য, আমাশয়, গনোরিয়া নিরাময় করে। শিকরের রসের মূত্রকারক, কৃমিনাশক গুণ আছে। শিকরের নির্যাস শ্বাসতন্ত্র ও বাকলের নির্যাস দাঁতের সমস্যায় উপকারী। তালের মধ্যে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও পুষ্টিগুণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। স্বাদের পাশাপাশি তালের স্বাস্থ্যগুণও অনেক। চলুন তালের স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে জেনে নিই- তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ আরও অনেক খনিজ উপাদান। এর সঙ্গে আরও আছে অ্যান্টি-অক্সিজেন ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান। পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম, চর্বি .১ গ্রাম, শর্করা ১০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন .০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন .৩ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায়ও তাল ভূমিকা রাখে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। তালের রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে৷ ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে। তালের রসে কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷ তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক। কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ ভালো করতে তাল ভাল ভূমিকা রাখে। কাশি সারাতে ৩-৪ চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে পুরোনো কাশি ভাল হয়ে যায়। বমি বমিভাবে ৩-৪ চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে বমি বমি ভাব চলে যায়। ৩-৪ চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে পুরুষত্বহীনতায় উপকার পাওয়া যায় । ৩-৪ চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে বুক ধরফরানী কমে যায় । পাকা তাল যেভাবে খাবেন তাল খাওয়ার নানা উপায় আছে। তবে পাকা তালের ক্বাথ জ্বাল দিয়ে ঘন করে খেয়ে থাকেন অনেকে। এর সঙ্গে নারিকেল, দুধ, চিনি, কলা ইত্যাদি মিশিয়ে আরও নানা স্বাদের খাবার তৈরি হয়। এর মধ্যে আছে— তালের বড়া: তালের ঘন নির্যাসের সঙ্গে ডিম, চালের গুঁড়া, গুড় বা চিনি এবং কখনো নারিকেল দিয়ে তালের পিঠা তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জে এই পিঠার ঐতিহ্য রয়েছে। তালের পিঠার সুন্দর সুবাস রয়েছে। তালের সেঁকা পিঠা: চিনি, দুধ, নারিকেল যোগ করে তালের ক্বাথ জ্বাল দিয়ে তার সঙ্গে চালের গুঁড়া বা আটা মিশিয়ে কলাপাতায় খামির রেখে চুলায় সেকে নিয়েও খেতে দেখা যায়। এ ছাড়া তালের রুটিও একটি মজাদার নাশতা। তালসত্ত্ব: তালের রস ও চিনি দিয়ে বানানো হয় তালসত্ত্ব। এটি রোদে শুকিয়ে সারা বছর খাওয়া যায়। অনেকে ভাত ও দুধের সঙ্গে এই তালসত্ত্ব খেয়ে থাকেন। তালের কেক: কেকের সব উপকরণের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে কেক বানানো হয়। এর রং খুবই আকর্ষণীয় হয়। তালের কেকের মধ্যে চিনি কম এবং ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগীদের জন্য ভালো খাবার হতে পারে। তালের জুস: তালের ক্বাথ, দুধ, চিনি দিয়ে জুস বানানো যায়। প্রচণ্ড গরমে তালের জুস পান করলে শারীরিক দূর্বলতা ও ক্লান্তিভাব দূর হয়।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |