পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির মৃত্যু হয়েছে ৬৮ জন
নিউজ ডেস্ক:
|
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৮ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ৩০, পুরুষ ১৭ ও শিশু ২১ জন। কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় নিখোঁজ চারজন। জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই করতোয়ার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক মরদেহ ভেসে উঠতে থাকে। এরপর করতোয়ার আউলিয়া ঘাট থেকে মাড়েয়া ও পাশের এলাকার শ্মশান ঘাটগুলোতে অধিকাংশ মরদেহ দাহ করা হয়। স্থানীয়রা জানান, পঞ্চগড়ের ইতিহাসে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। হাঁটুজলের নদী হিসেবে পরিচিত করতোয়ায় ডুবে একসঙ্গে ৬৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা এটাই প্রথম। মাড়েয়ার বাসিন্দা মজনু জানান, কোনোদিন তিনি এত মানুষের প্রাণহানি এই এলাকায় দেখেননি। তার ৩৪ বছরের জীবনে তো বটেই তার বাপ-চাচারাও এত মৃত্যু একসঙ্গে দেখেননি। বোদা ময়দান দিঘীর খালপাড়া গ্রামের হিমালয় (৩৫) এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। মহালয়ার দিন তিনি স্ত্রী স্বপ্না রানীকে নিয়ে নৌকাডুবির শিকার হন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বেঁচে গেলেও হিমালয়কে গত তিনদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনরা। তার চাচাতো ভাই মলিন জানান, হিমালয় দেড় মাস আগে বিয়ে করেন। বোদা উপজেলার সাকোয়ার হেমন্ত বর্মণও ওই নৌকার যাত্রী ছিলেন। নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে গিয়ে দুলতে দুলতে একপর্যায়ে ডুবে যায় বলে জানান তিনি। এরপর কোনোমতে সাঁতরে নদী পাড়ে আসেন হেমন্ত। মৃতরা হলেন- হাশেম আলী (৭০), শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), রুপালি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সানেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সুচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সুমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পুষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রুপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০), পারুল রানী (৩২), প্রতিমা (৩৯), সনেকা (৫৭), হরিকিশোর (৪৫), শিল্টু বর্মন (২৮), মহেন চন্দ্র (৩০), ভূমিকা রায় পূজা (১৫), আখি রাণী (১৬), সুমি রানী (৩৪), পলাশ চন্দ্র বর্মন (১৭), ধৃতি রানী (১০), সজিব রায় (৮), পুতুল (১৫), কবিতা (১১), যত্না রানী (৪০), মলিন্দ্র নাথ বর্মন (৫৬), মনিভূষণ বর্মণ (৪৬), মুনিকা (৩৮) ও দোলা রানী (০৫)। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকাযোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০-৬০ জনের ধারণক্ষমতার নৌকাটিতে শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতরে তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। মনে করা হচ্ছে, স্রোতের কারণে অনেক মরদেহ পানিতে ভেসে যেতে পারে। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের উদ্ধার কাজ বন্ধ নেই। রাতেও আমাদের লোকজন সেখানে আছে। একজন মানুষ নিখোঁজ থাকলেও আমাদের উদ্ধার কাজ অব্যাহত থাকবে। তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, তদন্তের তিন কার্য দিবস শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের মাঝে আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। আর আহতদের চিকিৎসা খরচ বহন করা হচ্ছে। এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ওয়াহিদুল ইসলাম, পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসন গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, নিহত ৬৮ জনের মধ্যে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার একজন, দেবীগঞ্জ উপজেলার ১৮ জন, বোদার ৪৪ জন, আটোয়ারীর দুজন এবং ঠাঁকুরগাও সদর উপজেলার তিনজন রয়েছে। এদের মধ্যে নারী ৩০, শিশু ২১ এবং পুরুষ ১৭ জন। তালিকাভুক্ত নিখোঁজের সংখ্যা চারজন। এই চারজনকে উদ্ধার করা গেলে উদ্ধার কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। এর আগে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় ওই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনার পরপরই ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর নিখোঁজ থাকেন অর্ধশত নৌকার যাত্রী।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |