ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন, প্যানডোরার ফাঁদে শচিনসহ ৩০০ ভারতীয়
নিউজ ডেস্ক:
|
ভারতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জন্য বিশেষ নাম আছে ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকারের। তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বলেন, যুবসমাজের ক্ষতি হতে পারে, এমন বিজ্ঞাপনও তিনি করতে রাজি হন না। সেই শচিনের নামই উঠে এসেছে প্যানডোরা পেপারস দুর্নীতিতে। বিদেশে শচিনের অবৈধ সম্পত্তি আছে বলে অভিযোগ। যদিও শচিনের আইনজীবী তা অস্বীকার করেছেন। শচিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইন্টারন্যাশনাল কনসোরটিয়াম অফ ইনভেসটিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে) যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে ৩০০ ভারতীয় এবং সংস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শচিন যাদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও অন্তত ৬০ জন পরিচিত ব্যক্তির নাম আছে বলে জানা গেছে। শচিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন। যা আইন মোতাবেক বেআইনি। পানামা দুর্নীতির কাগজ বাইরে আসার পর শচিন সেই বিনিয়োগ লিকুইডেট (ভাঙিয়ে ফেলা) করেছিলেন বলে অভিযোগ। এবং পুরো প্রক্রিয়াটিই অবৈধভাবে করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। শচিনের আইনজীবী অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, শচিন বিদেশের মাটিতে যে বিনিয়োগ করেছিলেন, তা ভারতের কর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই করা হয়েছিল। বিনিয়োগ ভাঙানোর পরেও তার জন্য প্রয়োজনীয় ভারতীয় কর দেওয়া হয়েছিল। সমস্ত ফাইলই তৈরি আছে। যদিও প্যানডোরা পেপারসের সঙ্গে জড়িত সাংবাদিকদের বক্তব্য, শচিনের বিরুদ্ধে তাদের হাতেও তথ্যপ্রমাণ আছে। অনিল আম্বানি ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং বিজনেস টাইকুন অনিল আম্বানি। বিদেশে তারও বিপুল সম্পত্তি আছে বলে তথ্যপ্রমাণ সামনে এনেছে প্যানডোরা পেপারস। অভিযোগ, ১৮টি অ্যাসেটের মাধ্যমে অনিল আম্বানি বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ জমিয়ে রেখেছেন। বস্তুত, বছরখানেক আগে যুক্তরাজ্যের একটি আদালতে অনিল নিজের সংস্থার ব্যাঙ্করাপসির কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্যানডোরা পেপারস বলছে, এখনো তার বিদেশে ১৮টি অ্যাসেটের মাধ্যমে অর্থ জমানো আছে। এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমকে অনিল কিছু জানাননি। নীরব মোদীর বোন অর্থ তছরুপের মামলা চলছে নীরব মোদীর বিরুদ্ধে। যদিও সেই ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন মোদী। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। প্যানডোরা পেপারসের তথ্য বলছে, নীরব মোদী তো বটেই তার বোনেরও বিপুল পরিমাণ অফশোর অ্যাসেট বা বিদেশে অবৈধ বিনিয়োগ আছে। নীরব মোদী দেশ থেকে পালানোর একমাস আগে বিদেশে একটি ট্রাস্ট তৈরি করে অর্থ জমানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। বস্তুত, বহু ভারতীয় বিদেশে ট্রাস্ট তৈরি করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ। বিদেশের ট্রাস্টে অর্থ বিনিয়োগ করে তারা বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। জড়িত বিওকন? ভারতের নাম করা কনস্ট্রাকশন সংস্থা বিওকন। যার অন্যতম প্রধান কিরণ মজুমদার শ। অভিযোগ, কিরণের স্বামীও বিদেশে ট্রাস্ট তৈরি করে কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিওকনের বিরুদ্ধেও সমস্ত তথ্য প্যানডোরা পেপারসের হাতে আছে বলে সাংবাদিকদের দাবি। সব মিলিয়ে ভারতের মোট ছয়জন রাজনীতিবিদের নাম প্যানডোরা পেপারসে যুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও বেশ কিছু সংস্থা এবং ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ৩০০। তবে সকলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিস্তারিত রিপোর্ট এখনও সামনে আসেনি। কর ব্যবস্থা এবং তার আইনি বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট বিশ্বজিৎ দত্ত। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, 'কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগের চল নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এ ঘটনা ঘটে আসছে। আগে সুইস ব্যাঙ্কের মতো বিভিন্ন ব্যাঙ্কে টাকা রাখার চল ছিল। এখন আইন বাঁচাতে অনেকেই বিদেশে ট্রাস্ট তৈরি করে অথবা কোনো সংস্থায় বিনিয়োগ করে কর ফাঁকি দেন। ফলে প্যানডোরা পেপারস ফাঁসে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।' বিশ্বজিতের বক্তব্য, বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেবির কড়া আইন আছে। কিন্তু সেই আইন ফাঁকি দিয়ে অনেকেই এ কাজ নিয়মিত করে যাচ্ছেন। ভারতীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। রাজনীতিবিদ থেকে ব্যবসায়ী সকলেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। সমস্ত তথ্য সামনে এলে সত্যি সত্যি প্যানডোরার বাক্স খুলে যাবে। এমন নয় যে, সরকারের হাতে এসব তথ্য নেই। কিন্তু সবক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া প্রায় অসম্ভব। |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |