জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে অভিনব কাজ করতে হয়েছেঃ আইজিপি
নিউজ ডেস্ক:
|
জঙ্গিবাদে জড়ানোর পর যারা নিজের ভুল বুঝতে পেরে সমাজে সহজ পথে ফিরে এসেছেন, তাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে ছিল বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, সেই সময়ে র্যাবে যারা ছিলেন, তাদের জীবনেরও ঝুঁকি ছিল। সেটা করতে গিয়ে আমাদের অভিনব কাজ করতে হয়েছে। যা এখনো প্রকাশ্যে বলার সময় হয়নি। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের লং বিচ হোটেলে আয়োজিত ‘নবজাগরণ’ শীর্ষক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে ধর্মীয় জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিজ উদ্যোগে ও স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন। এমন ঘটনাও আমরা দেখেছি, বাবা-মা সন্তানকে নিজে এসে র্যাবের হাতে তুলে দিয়েছেন জঙ্গি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে। যখন হলি আর্টিসান অ্যাটাক হয় তখন র্যাবে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদেরও আমরা সমাজে পুনর্বাসিত করেছি। আজ বলছি, সেই পুনর্বাসন ব্যবস্থা তখন ততটাও সহজ ছিল না। বেনজীর আহমেদ বলেন, সুন্দরবনে ৪০০ বছরের জলদস্যু সমস্যা ছিল, সেটি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে নিশ্চিহ্ন করেছি। তা কিন্তু শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয় সমঝোতার মাধ্যমে করা হয়েছিল। জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের মধ্যেই র্যাব থেমে থাকেনি, প্রায় ৩০০ জলদস্যুকে এখনো বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে র্যাব। এই জলদস্যু এখন সমাজের মূলধারায় ফিরে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, অপরাধী হিসেবে কেউ জন্ম নেয় না। মূলত সমাজ, পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাকে অপরাধী করে। শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষ এমন পরিস্থিতির শিকার হন। তবে সেগুলো যদি আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে সমাজে থেকে ধীরে ধীরে অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করতে পারি শূন্য অপরাধ হয়, এমন সমাজ কায়েম করার। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসএসসি, এইচএসসি ও বিএ পাস দিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা হয় না। এদের মধ্যে হয়তো এক শ্রেণির অংশ সিভিল সার্ভিসের অফিসার হবে, একটি অংশ হবে কেরানি আর বাকি অংশ হবে বেকার। এজন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। র্যাব আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা গেলে কীভাবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরেকটি কথা প্রায়ই বলেন, চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে উদ্যোক্তা হতে। উদ্যোক্তা হলে দেশের অর্থনৈতিক যে সমৃদ্ধি তা দ্রুত গতিতে হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রমুখ। ‘অপরাধকে না বলুন’- স্লোগানে অপরাধ প্রতিরোধবিষয়ক সাম্প্রতিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় নতুন কর্মসূচি নেয় এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)। নতুন এ কর্মসূচি ‘নবজাগরণ’ এর আওতায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বা ঝুঁকিতে থাকা ৩৬ তরুণ-তরুণীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেয় র্যাব। তাদের মধ্যে হোটেল সার্ভিস বয় ছয়জন, সার্ফিং পাঁচ জন, ট্যুরিস্ট গাইড প্রশিক্ষণ পাঁচজন, ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ পাঁচজন, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ ১০ জন, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পাঁচজনকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ (বৃহস্পতিবার) তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |