কারচুপির প্রমাণ দিতে পারলে ইভিএমে ভোট হবে নাঃ ইসি আলমগীর
নিউজ ডেস্ক:
|
কারচুপির প্রমাণ দিতে পারলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। সোমবার (২৯ আগস্ট) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। ইভিএমে কারচুপি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি আলমগীর বলেন, যিনি বলছেন, তাকে প্রমাণ দিতে হবে। তিনি যদি আমাদের কাছে এসে দেখতে চান, জানতে চান, আমরা উত্তর দেব। তিনি যদি প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে বাতিল করে দেব। এর বাইরে কে কী বলবে, তা দেখে তো আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমাদের কাছে এসে যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, ইভিএমে কারচুপি করা যায়, তাহলে ইভিএমে ভোট হবে না। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী একটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। তারা টহল দেবে। আমরা নির্বাচনের আগেই একটি রিপোর্ট নিই বিভিন্ন সূত্র থেকে, যে কোন কেন্দ্রগুলো ভালনারেবল হতে পারে। র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীর কাছে সেগুলোর তালিকা আমরা দিই। কারণ পর্যাপ্ত সদস্য তো তাদের নেই। তারা পর্যালোচনা করে সেনা, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরও বলেন, জোরপূর্বক কেউ ভোট দিতে চাইলে প্রথমে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেবেন। তারা কুলিয়ে উঠতে না পারলে বিজিবি কিংবা সেনাবাহিনীর সহায়তা নেবেন। আমাদের কন্ট্রোল রুম থাকে, সবার হাতে মোবাইল আছে, সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বিজিবি যাবে, বিজিবি না পারলে সেনাবাহিনীকে ডাকবে। র্যাব, বিজিবি পারবে না এমন নয়। হয়তো লাখে একটি এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সেটি হলে সে নির্বাচন বন্ধ থাকবে। পরবর্তী তারিখে আবার নির্বাচন হবে। ইসি আলমগীর বলেন, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন দেশের অন্যান্য আইন কভার করে না। এক্ষেত্রে মৌলিক আইন পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া যিনি ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন, তার হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকে না। মূল কথা হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী সহযোগিতা করবে। সেটাতে তো আমরা একমত হয়েছি। প্রতি কেন্দ্রে সেনাবাহিনী দেওয়া তো সম্ভব নয়। তবে সরকারের কাছে প্রস্তাব থাকবে। আশাকরি সরকার সেই সহযোগিতা করবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। সেখানে বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকবে। পৃথক দিনে ভোটগ্রহণ করার বিষয়ে ইসি আলমগীর বলেন, একাধিক দিনে ভোট বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করা কঠিন। তবে এজন্য আইনে কোনো বাধা নেই। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আমাদের দেশে একাধিক দিনে নির্বাচন করার ব্যবস্থা আছে। তবে আমাদের এখানে একাধিক দিনে নির্বাচন হয় না। কারণ এটি ছোট দেশ। ভারতে তো একদিনে সম্ভব নয়। আমাদের এখানে তো সম্ভব। বরং একাধিক দিনে করলে আরও নানা জটিলতা দেখা দেবে। একটি সুবিধা করার জন্য আরও দশটি অসুবিধা যদি তৈরি হয়, সেই পন্থা অবলম্বন করা ঠিক হবে না। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের সেবা ও কাজ ভিন্ন। ইসির অধীনে আনলে জনগণকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া তো কিছু হবে না। তবে নির্বাচনের সময় যে সহযোগিতা দরকার, তা নেবো। তারা সেটা দিতে বাধ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তো প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি অলরেডি আইনে আছে। কাজেই ইসির অধীনে মন্ত্রণালয়কে আনার প্রয়োজন নেই। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, কোনো দলের নির্বাচনে আসা, না আসা গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই অধিকারে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারব না। তারা কী ধরনের সহযোগিতা চায়, তা আমাদের কাছে এসে বলতে হবে। এমন সহায়তা চাইবে যেটি নির্বাচন কমিশনের দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এখন একটা দল যদি বলে আমাদের ফান্ড দিতে হবে, সেটা দেওয়ার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। যারা আলোচনা করেছে ইভিএমে নিয়ে, মত দিয়েছে তাদের আমরা আমলে নিয়েছি। বিএনপি তো আলোচনায় আসেনি। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে, ইভিএমের পক্ষেই বেশি বলেছে। ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট সম্ভব কি-না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইসি সচিবালয় বলেছে, সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা। বর্তমানে যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অস্থিরতা আছে। এখন কতটুকু কেনা সম্ভব হবে সেটা বলতে পারছি না। আমরা বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ইভিএম নিই। তারাও তো নিজেরা তৈরি করে না, বিদেশ থেকে আনে। সচিবালয় বলেছে আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা প্রজেক্ট করতে পারবে। পরে ক্রয় ও প্রশিক্ষণে তারা যেতে পারবে বলে মনে করছে। যদি বিদেশ থেকে আনতে এবং ফান্ড নিয়ে কোনো সমস্যা না হয় তাহলে ১৫০ আসনে সম্ভব। জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) পাশাপাশি নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে এ কমিশনার বলেন, অতীতে নির্বাচন করে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ রয়েছে, এতে আমরা কতজনকে প্রস্তুত করতে পারব তার ওপর নির্ভর করবে রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিজস্ব কর্মকর্তা কতজনকে নিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে এক জেলার ডিসিকে অন্য জেলায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বা সিনিয়র জেলা কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হতে পারে। আবার একজেলার তিনটি আসনে ডিসি, দুটিতে আমাদের কর্মকর্তা এভাবেও হতে পারে।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |