শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

লোডশেডিং এর কারনে চাহিদা বেড়েছে তালপাতার তৈরি হাতপাখার
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: শনিবার, ২০ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৪ বিকাল | অনলাইন সংস্করণ
লোডশেডিং এর কারনে চাহিদা বেড়েছে তালপাতার তৈরি হাতপাখার

ছবি । সংগৃহীত

ভয়াভহ লোডশেডিং আর তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে তালপাতার তৈরি হাতপাখার। গরমের প্রভাব যতই বাড়ছে পাখার চাহিদা ততই বাড়ছে। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হাতপাথা তৈরির গ্রাম বগুড়ার কাহালু উপজেলার ১০ গ্রামে রয়েছে এখন ব্যস্ততা। হাতপাখা তৈরি করেই ১০ গ্রামের মানুষের পরিবারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। 

জানা যায়, শ্রাবণের শেষ নাগাদ এসে বগুড়ায় বেড়েছে গরমের তীব্রতা। তীব্র দাপদাহের কারণে জনবীজন নাজেহাল। এর সঙ্গে ঘনঘন লোডশেডিং এর কারণে তালপাতার তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে দিগুণ। লোডশেডিং এর কারণে প্রাচীন ঐতিহ্য এই তালপাতার পাখার ব্যবহার এখন সব জায়গায় বেড়েছে। তালপাতার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের যোগীরভবন, আতালপাড়া ও আড়োলাসহ ১০ গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারে ব্যস্ততা বেড়েছে। এই এলাকার বেশিরভাগ পরিবারই তালপাতার পাখা তৈরীর কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন।

কাহালুর তালপাতার পাখার গ্রামগুলো ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি বাড়ির উঠানেই চলছে পাখা তৈরির কাজ। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্ডার নেওয়া পাখা তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছেন কারিগররা। কেউ পাখা তৈরির জন্য তালপাতা ব্যবহারের উপযোগী করছেন। আবার কেউ পাখা তৈরি করে সৌখিনতা বৃদ্ধির জন্য তুলিতে রঙ নিয়ে পাখায় ফুল তুলছেন। কেউ পাখা তৈরি করে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। কেউ বাঁধছেন ডাটা। 
পাখা তৈরীর কারিগড়রা জানান, বিভিন্ন প্রকার পাখা তৈরি হয়ে থাকে। প্রকারভেদে এগুলির নাম দেওয়া হয়েছে হর্তন, ঘুরকি, তেওয়াল ঘুরকি, ডাগুর পাখা, পকেট পাখা ইত্যাদি। তবে শহর অঞ্চলে নকশি করা পাখা বেশি বিক্রি হয়। সুঁই সুতার সাথে নকশা করা পাখা শহুরে লোকজন পছন্দ করেন বেশি। সাধারণত এই পাখাগুলো অর্ডার নিয়ে ২০০ থেকে ৫০০ টাকাতে বিক্রি হয়। পাখাগুলোতে ফুল, ফল, দৃশ্যসহ বিভিন্ন প্রকৃতির অবয়ব ফুটে তোলা হয় সুঁই সুতা দিয়ে।

পাখার গ্রামের বাদশা মিয়া (৬০) জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে তৈরি করা পাখা বিক্রি না হওয়ায় তিনি বড় ধরনের লোকসানে পড়েছিলেন। এই বছর করোনার প্রভাব না থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাখা তৈরির অর্ডার দিচ্ছেন। অর্ডারী পাখা তৈরি করতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। গত বছর একশো পাখা ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে পারেননি। এবার সেই পাখা ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তারপরে বিভিন্ন এলকার ব্যবসায়ীদের চাহিদা মোতাবেক তিনি পাখা সরবরাহ করতে পারছেন-না। 

আড়োলা উত্তরপাড়ার বাহাদুর ও তার স্ত্রী দুজন মিলে সমানে পাখা তৈরি করেও অনেকের চাহিদা অনুযায়ি পাখা সরবরাহ করতে পারছে না।
মমতাজ উদ্দিন ও তার স্ত্রী উঠানে বসে দুজন মিলে পাখায় রঙ করছেন। তারা জানান, গত ২ বছর তেমন পাখা বিক্রি হয়নি। এই বছর পাখা বেশি বিক্রি হচ্ছে এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

তানিয়া আক্তার জানান, অবসরে পাখা তৈরি করি। বাড়তি যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের জন্য খরচ করতে হয়। সংসারও চলে যাচ্ছে। 

শফিকুল ও তার স্ত্রী শাহানা জানান, তারা দুজনে রঙের কাজ করেন। ১০০ পাখায় রঙ করলে তারা ৭০ টাকা মজুরী পান। তারা পুরো পাখা রং করেন না। রঙ করেন ইচ্ছেমত নকশা করে। প্রতিদিন তারা চারশত থেকে পাঁচশত পাখা রং করতে পারেন। দুজনে মিলে দিনে পাঁচশত থেকে ছয়শত টাকা করেন। 

নজরুল ও তার স্ত্রী জানান, এই সিজনে পাখা তৈরি করে তারা প্রতিদিন ১ হাজার টাকার মত আয় করেন। তারা জানান, এখানে প্রায় ৪ প্রকারের পাখা তৈরি হয়। প্রকারভেদে ডাটি পাখা ৩০ টাকা পসি, ছোট ডাটি পাখা ২০ টাকা পিস, ঘুরকি পাখা ১০ টাকা থেকে ১৩ টাকা পিস ও পকেট পাখা ৮ টাকা পিস পাইকারী হিসেবে বিক্রি হয়। এইসব পাখা পাইকাররা বিভিন্ন হাটে বাজারে নিয়ে গিয়ে তারা আবার বেশি দামে বিক্রি করে। পাখা তৈরির পর পাইকাররাই বাড়ি বাড়ি পাখা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। 

 

নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা

 

« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ