মহা ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি গাছঃ অ্যালোভেরা
নিউজ ডেস্ক:
|
প্রাচীন সভ্যতায় অলৌকিক ভেষজ হিসেবে অ্যালোভেরার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। অ্যালোভেরা আজ থেকে ৬০০০ বছর আগে মিশরে উৎপত্তি লাভ করে। আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কার। বাংলায় অ্যালোভেরা ঘৃতকুমারী নামে পরিচিত। অ্যালোভেরা বহুজীবী লিলি প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ। দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। অ্যালোভেরার পাতাগুলো পুরু, দুধারে করাতের মত কাঁটা এবং ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শাঁস থাকে। সবরকম জমিতেই অ্যালোভেরা চাষ সম্ভব, তবে দোঁআশ ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। অতি উপকারী ভেষজ অ্যালোভেরা গাছ কিন্তু আপনি ঘরেই রাখতে পারেন। মাত্র এক কিংবা দুই ফুট লম্বা এই গাছ টবেই লাগানো সম্ভব। অ্যালোভেরায় রয়েছে ২০ রকমের খনিজ পদার্থ। মানবদেহের জন্য যে ২২টা অ্যামিনো অ্যাসিড প্রয়োজন এতে সেগুলো বিদ্যমান। অ্যালোভেরার স্বচ্ছ প্রতিটি পাতায় রয়েছে ৯৬ শতাংশ পানি, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড। এছাড়াও ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৮, বি১২, সি এবং ই রয়েছে। অ্যালোভেরার রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অব্যর্থ। কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা জেল ত্বকের কোষে পুষ্টির যোগান দেয় এবং একই সঙ্গে ত্বকের টক্সিন দূর করে। চীনা এবং ব্রিটিশ আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় একবাক্যে স্বীকৃত হয়েছে অ্যালোভেরার উপকারিতা। অ্যালোভেরা খাওয়া অথবা ত্বকে লাগানো দুভাবেই আপনি উপকৃত হতে পারেন। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরাকে ‘অলৌকিক ভেষজ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এই একমাত্র ভেষজটি কাটাছেঁড়া, শুষ্ক ত্বক এবং পোড়া সারাতে কাজ করে। সৌন্দর্য চর্চায় জনপ্রিয় ভেষজ অ্যালোভেরা। চুল, ত্বক এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের ভার নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিন সবুজ অ্যালোভেরার দায়িত্বে। ত্বক ফর্সা করার ক্রিম থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত ডায়েট সাপ্লিমেন্টের কয়েক লাখ ডলারের বাণিজ্যের মূল উপাদান হচ্ছে অ্যালোভেরা। চিকিৎসকের মতে, ‘ভিটামিন সি, ই এবং বিটা ক্যারোটিন সৃমদ্ধ অ্যালোভেরা একদিকে যেমন পুষ্টিকর তেমনি বার্ধক্য ধরে রাখতে সক্ষম। তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চরাইজারের কাজ করে অ্যালোভেরা। ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে ত্বককে রাখে প্রাণবন্ত। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস অ্যালোভেরার জুস পানের পরামর্শ চিকিৎসাবিদদের। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং পাকস্থলির যেকোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করে। আপনি যদি ভেতর থেকে সুস্থ থাকেন তাহলে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য তো প্রকাশ পাবেই। ডায়েট সাপ্লিমেন্ট, জুস ইত্যাদি উপাদানে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সৃমদ্ধ অ্যালোভেরা দেহের কাঠামোগত উন্নয়ন করে এবং প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। এটি প্রোটিনের ভালো উৎস। সুতরাং অ্যালোভেরা পেশির উন্নয়ন ঘটায় এবং শক্তির জোগান দেয়। অনেকেই জানেন না শরীরের নানাবিধ রোগ মুক্তির কাজেও অ্যালোভেরা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালোভেরা দেহের রোগ নিরাময়ে নীরবে কাজ করে। জেনে নিন অ্যালোভেরার উপকারিতা- হার্ট সুস্থ রাখতে অ্যালোভেরা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার জুস। অ্যালোভেরা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ ও সক্রিয় থাকে। ওজন কমাতে সাহায্য করে দি এভরিথিং গাইড টু অ্যালোভেরা ফর হেলথ বইয়ের লেখক ব্রিট ব্র্যান্ডনের মতে, ডায়েটের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে ওজন কমাতে কার্যকরী অ্যালোভেরা। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ অ্যালোভেরাতে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড এবং এনজাইম। অ্যালোভেরা শুধুমাত্র ওজন নিয়ন্ত্রণ করে না। হজম শক্তি বাড়িয়ে ওজন কমানোর কাজকে সহজ করে। নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করলে আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে এই রস। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অ্যালোভেরা জুস অত্যন্ত কার্যকরী। অ্যালোভেরা জুস বা জেল প্রাকৃতিকভাবে রক্তে চিনির পরিমাণ কম করে। নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস খেলে কোনো ওষুধ ছাড়াই ফাস্টিং-এ সুগার কাউন্ট অনেক কম আসে। জেলে ফাইটোস্ট্যারলস নামক শক্তিশালী উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফাইটোস্ট্যারলসের অ্যান্টিহাইপার গ্লাইসেমিক প্রভাব আছে যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য উপকারী। ক্যানসার প্রতিরোধে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা স্তন ক্যানসার বিস্তার রোধ করে। এ ছাড়াও অন্যান্য কিছু ক্যানসার প্রতিরোধেও অ্যালোভেরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ভাঙলে ভেতরে যে জেলির মতো পদার্থটি দেখা যায়, সেটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে দারুন উপযোগী। এতে থাকে একাধিক ভিটামিন যার মধ্যে ভিটামিন ই ও ভিটামিন সি ত্বকের জন্য বিশেষ ভাবে উপযোগী। তা ছাড়া এতে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ত্বককে কোমল ও মোলায়েম রাখে। রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বককে পুনরায় সজীব করতেও সহায়তা করে অ্যালোভেরা। মেকআপ তুলতে অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য কোমল ও আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ তাই কৃত্রিম রূপটান তোলার সময় এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি তুলোর টুকরো অ্যালো ভেরার জেলে মিশিয়ে মুছে নিলেই কেল্লাফতে। শুধু রূপটানই নয়, দৈনিক ধুলো ময়লা তুলতেও একই ভাবে ব্যবহার করা যায় এই পদ্ধতি। দাড়ি কাটার ক্রিম হিসেবে অ্যালোভেরার ঘনত্ব ও তেলতেলে রূপের জন্য দামি দাড়ি কাটার সাবান বা ক্রিমের বদলে ব্যবহার করা যায় এটি। গরম জল, অল্প তেল ও অ্যালো ভেরা জেলের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে দাড়ি কাটার সময়। এটি যেহেতু প্রদাহ কমাতেও বেশ কার্যকর তাই দাড়ি কাটার পর জ্বালাও কমে এতে। দাঁতের যত্নে অ্যালোভেরার রস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথার উপশম করে থাকে। দাঁতে কোনও সংক্রমণ থাকলে দূর করে দেয় তাও। নিয়মিত অ্যালো ভেরার জুস খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয়রোধ করা সম্ভব। চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে চুল পড়ার সমস্যা দূর করতে পারে অ্যালো ভেরা। এর রসে আছে প্রোটিওল্যাক্টিক এনজাইম, যা মাথার তালুর কোষগুলির স্বাস্থ্যরক্ষায় সক্ষম। নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমবে, বাড়বে চুলের দৈর্ঘ্য। দূর হবে মাথার খুশকি এবং সংক্রমণ। এটিকে কন্ডিশনার হিসাবে ব্যবহার করলে চুল থাকবে কোমল। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায় অ্যালোভেরার পাতার নীচে ল্যাটেক্সটি নামে হলুদ রঙের আঠালো পদার্থ পাওয়া যায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে দারুণ কার্যকর। অ্যালোভেরার জুস তৈরির প্রক্রিয়া অ্যালোভেরার স্বাদ একটু তিতকুটে সুতরাং, আপনি একবারে খালি খেতে পারবেন না। কিছুটা অ্যালোভেরা নিয়ে ছোট ছোট টুকরা করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার অন্যকোনো ফল বা সবজির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এরপরও যদি তিতা মনে হয়, তাহলে মধু বা আখের গুড় মিশিয়ে নিতে পারেন। সঙ্গে যোগ করতে পারেন লেবুর রস।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |