কী ভাবে ? মেথি দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করবেন
নিউজ ডেস্ক:
|
প্রাচীনকাল থেকে রান্নায় মেথি ব্যবহার হয়ে আসছে। উপমহাদেশের মশলাগুলোর মধ্যে অন্যতম মেথি। মেথি ফোড়ন দিয়ে রান্না করা তরকারি, মেথির শাক এমনকী চচ্চড়ির পাঁচফোড়নে মেথির সুগন্ধ সকলেরই প্রিয়। স্বাদ বাড়ানো ছাড়াও মেথির বীজ স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মশলা থেকেও যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে মানুষ তেমন সচেতন নন। মেথি বীজে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ, যার কারণে এটি অনেক গুরুতর রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসাতেও সহায়ক। মেথির বীজে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মেথির বৈজ্ঞানিক নাম ট্রিগনেলা ফয়েনাম গ্রেইকাম। মেথি একটি বর্ষজীবী গাছ। একবার মাত্র ফুল ও ফল হয়। তিনটি করে পাতা একসাথে জন্মায়। ফুলে ও তিনটা করে পাপড়ি থাকে। মেথি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরকে রাখে সতেজ। রক্তের উপাদানগুলোকে করে কর্মক্ষম। ফলে মানুষের কর্মোদ্দীপনাও বৃদ্ধি পায়। মৌসুমি রোগগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। চলুন জেনে নিই কীভাবে মেথির ব্যবহার করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। ভেষজে ঔষধ হিসাবে মেথি বীজ ডায়াবেটিস, পিরিয়ড ক্র্যাম্প, বর্ধিত প্রোস্টেট এবং স্থূলতার মতো সমস্যার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মেথি। সদ্য মা হয়েছেন এমন মহিলদের জন্যা বিশেষ, উপকারী। মেথি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়, বিশেষ করে এর ছোট দানাগুলো ভিজিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। মেথি স্বাদে একটু তেতো। এতে রয়েছে রক্তে চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেলে কৃমি নাশ হয়। রক্তে চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মেথি শ্রেষ্ঠ পথ্য। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মেথি দারুন কাজ করে। মেথির বীজে পাওয়া অ্যামিনো অ্যাসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মেথির পানি পান করা খুবই উপকারী। অঙ্কুরিত মেথি আরও ভালো কারণ এতে ভেজানো মেথির চেয়ে ৩০-৪০% বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত মেথি খান, তাদের ডায়াবেটিসজনিত অসুখগুলো কম হয় এবং স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। এক সমীক্ষার ফলাফল বলছে নিয়মিত ১০ গ্রাম মেথি গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ফর ভিটামিন অ্যান্ড নিউট্রিশন রিসার্চ -এ প্রকাশিত হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেথিদানার পানি ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ৩০টি দেশের ২৫ হাজার পুরুষের উপর গবেষণায় করে দেখা গেছে, যেসব পুরুষ তাদের যৌনশক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা মেথির রস দিনে দু’বার পরিমাণ মতো সেবন করলে আশ্চর্য সুফল পেতে পারেন। এই পরিমিত সেবনে তাদের দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠবে আরও সুখময়। হতাশা বা অবসাদ, অতিরিক্ত শারীরিক ওজন ও অ্যালকোহল পানে অসুস্থতা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বহু অসুখ ও শারীরিক সমস্যার জন্য মেথির রস এক মহৌষধ! মেথির রসে ‘সাপোনিস’ বা ‘ডাইওসজেনিন’ নামে এক ধরনের যৌগ পদার্থ আছে, যা মানবদেহের হরমোন স্তর বা এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভেজানো মেথি খেলে হজমশক্তি বেড়ে যায় এবং গ্যাস্ট্রাইটিস দূরে রাখতেও ভালো। পেটের সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি, ফোলাভাব এড়াতে আপনার এটি খাওয়া উচিত। মেথি বীজ প্রকৃতিতে গরম। এই কারণেই এটি কাশিতে উপকারী। যাদের কফের প্রবণতা বেশি তারা মেথির বীজ গুঁড়ো, ভেজানো, অঙ্কুরিত বা গোটা যে কোনও রূপে খেতে পারেন। পিত্ত বা অগ্নি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মেথির জল বা ভিজিয়ে বা অঙ্কুরিত বীজ পান করা উচিত, এর ফলে অ্যাসিডিটি এবং অন্যান্য পেট সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। রক্ত পরিষ্কার রেখে হৃদরোগ থেকে বাঁচতে মেথির বীজ ভিজিয়ে বা অঙ্কুরিত করে খেতে হবে। মেথি যদি আপনি আপনার চুলে প্রয়োগ করেন তাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করবে। যেমন, চুল পড়া, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। মেথির দানাকে কিছুটা গরম করে সারারাত নারিকেল তেলে ভিজিয়ে রেখে চুলে মেসেজ করলে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পাওয়া যাবে। এছাড়াও, ত্বক পরিষ্কার করতে, বিভিন্ন ক্ষত এবং ব্যথা সারাতেও এটি অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়া আপনার প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মেথি গাছের নির্যাস ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ, কালো দাগ এবং ফুসকুড়ি নিরাময় হয়। মেথির দানা ক্যানসারের মতো রোগের প্রকোপও কমাতে সাহায্য করে। অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকেও রেহাই দেয়। মেথির পানি যেভাবে বানাবেনঃ একটি কড়াই বা প্যানে মেথি বীজ ভাল করে ভেজে নিন। ভাজার পরে বীজের গুঁড়া তৈরি করুন। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ মেথি বীজের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। আপনার মেথির পানি প্রস্তুত। স্বাস্থ্যের ভাল রাখতে মেথি বীজের জল সেবন জরুরি। মেথিবীজের চা ওজন কমাতে এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সামান্য পানি দিয়ে কিছু মেথি বীজ বেটে নিন। একটি পাত্রে খানিকটা পানি ফুটিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে ওই মেথি পেস্ট মিশিয়ে দিন। চাইলে এর সঙ্গে কিছু ভেষজ মশলাও দেওয়া যেতে পারে। যেমন- আদা বা দারুচিনি। তারপর পাত্র ঢাকনা দিয়ে ঢেকে একসঙ্গে সবকটি মশলা অন্তত ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। প্রতিদিন খালি পেটে এই চা খেলে ফল পাবেন হাতেনাতে।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |