বৈশ্বিক সংকটেও আমাদের চিন্তার কিছু নেই
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০২:৪০ রাত | অনলাইন সংস্করণ
|
করোনা মহামারির পর মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে এই সংকট ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘমেয়াদি হবে। আগামী বছর যে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে সে বিষয়ে পূর্ব সতর্কতা রয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় দিকগুলো নিয়ে আলোকপাত করেছেন, যা আমাদের আশান্বিত করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশবাসীকে নিজ নিজ জমিতে চাষাবাদ করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংকট মোকাবিলায় আলাদা একটা ফান্ড প্রস্তুত করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে আশা করা যায় ভালো কিছু হবে। কৃষি বা খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে আমরা টিকে থাকতে পারব। আমার দেশের লোকজন শান্তিতে থাকতে পারবে। আশার কথা হলো আমাদের রিজার্ভ যথেষ্ট। দেশের অর্থনীতির জন্য সরকার স্বল্প, মধ্য ও দ্রুত মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। যখনই কোনো সংকট আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের গুণে আমরা ঠিকই সমাধানের পথ খুঁজে পাই। সুতরাং আমাদের চিন্তার কিছু নেই- জোরেসোরে এই বিষয়টি বলা যায়। এরমধ্যে মূল্যস্ফীতি বিশ্বকে প্রায় নাজেহাল করে ফেলেছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সবার আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হতে হবে- এর বিকল্প নেই। খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ এবং বণ্টন নিশ্চয়তার সঙ্গে, শিল্প-কলকারখানার গতি, বেকারত্ব বৃদ্ধিতে লাগাম দেওয়া, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে জনগণের জীবনের ওপর চাপ কমানো ইত্যাদি পদক্ষেপ নিতে হলে আগে যুদ্ধ থামাতে হবে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ব্যবস্থাপনার এক চিত্রে তুলে ধরা হয় যে, ৪৫টি দেশের ২০ কোটি ৫১ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগবে এবং ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। সোমালিয়ার উপকূলবর্তী তিনটি অঞ্চলে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রবল খাদ্য সংকটের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের মূল্য আট শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে রপ্তানি মূল্য সূচক কমেছে দুই শতাংশ। এ থেকেই আঁচ করা যায় পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও এসে পড়তে পারে। ১৯৩০ সালেও বিশ্ব মহামন্দার মুখোমুখি হয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে মূলত ১৯৭০ সালের মন্দার কথাই ঘুরেফিরে আসছে। দ্য গ্রেট ইনফ্লেশনের তথ্যে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল। সে সময় উৎপাদন বাড়ে, কমে যায় বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতিও ছিল অনেক কম, এক শতাংশের ঘরে। কিন্তু ১৯৬৫ সাল থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। বাড়তে থাকে বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি। এই পরিস্থিতি ছিল ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। এ সময়কেই বলা হয় দ্য গ্রেট ইনফ্লেশন। এ সময়ই আবার মন্দার অভিজ্ঞতাও হয়। এখন সেই সময়ের পরিস্থিতিরি সঙ্গে মিল খুঁজলে মুল্যস্ফীতির ক্রমোত্থান এবং বেকারত্ব দুটোই পাওয়া যায়। এখান থেকে উত্তরণ যে সহজ কথা নয় সেটাও জানা আছে। কিন্তু এই অনিবার্য পরিণতি কীভাবে সম্মিলিতভাবে এড়ানো যায় সেটা নিয়ে কোনো ঐক্যমত চোখে পরছে না। আশঙ্কাটা এখানেই। ‘বিশ্বমন্দা কি আসন্ন’ শিরোনামে বিশ্বব্যাংকের একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালের পর এবার অর্থনীতির গতি সবচেয়ে কমে গেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপের প্রবৃদ্ধি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এর প্রভাবে আগামী বছর মন্দায় রূপ নিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বিগত ৪০ বছরেও দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বছর নাগাদ বিশ্বমন্দার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেটি ঠেকানো সম্ভব কিনা সে বিষয়ে বিশ্লেষণ দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও এখনও পৃথিবীর অনেক দেশ আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি। অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেগুলো সমন্বিতভাবে করতে হবে। হঠাৎ নেওয়া এই উদ্যোগ ধাপে ধাপে নিলে অর্থনীতিও সহনীয় হবে। নীতি সহায়তাগুলো হঠাৎ তুলে না দিয়ে বাজার চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে করতে হবে। মধ্য মেয়াদে একটি কাঠামোর আলোকে নীতি সহায়তা সাজাতে হবে। শ্রমবাজার, নিত্যপণ্য এবং বাণিজ্যের গতির সঙ্গে নীতিগুলোর সমন্বয় করতে হবে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ক্ষতিকর প্রভাবে দরিদ্র দেশগুলোই বেশি ভুগছে। ফলে অর্থনৈতিক টানাপোড়ন, খাদ্য সংকট এবং ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। এর মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পরিবর্তে দীর্ঘায়িত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলো এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এ মন্দার হাওয়া থেকে বাদ যাবে না। পৃথিবীতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ ধরনের বিপর্যয় সামলে ওঠা আরেকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দেওয়া ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী সংকট উত্তরণে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমত, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সুসমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’ দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক ও সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এ প্রয়াস পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। তৃতীয়ত, কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষিখাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। শেখ হাসিনা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিশেষ করে এলডিসিতে অনেক সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমরা বিদ্যমান উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার সুবিধা নিতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে আবাদি জমি আছে, উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী আছে, দেশ নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করার মতো গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা আছে। সুতরাং আমাদের চিন্তা করার কিছু নেই। এখন আমাদের সময় এগিয়ে যাওয়ার। লেখক: আদম তমিজী হক, রাজনীতিক ও সমাজকর্মী। |
ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭