সরকার পতনের ধ্বনি প্রতিধ্বনি হচ্ছেঃ রিজভী
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২, ১২:৫৮ রাত | অনলাইন সংস্করণ

সরকার পতনের ধ্বনি প্রতিধ্বনি হচ্ছে দিক-দিগন্তে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রায় দেড় দশক ধরে দুঃশাসনকবলিত বাংলাদেশের মানুষ এবার হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে নিশিরাতের সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। আমাদের সভা সমাবেশগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন যেভাবে তৃণমূলের উত্থান হয়েছে তাতে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

‘জনসভাগুলোতে মানুষ আসছে বানের মতো। কণ্ঠে তাদের হারানো অধিকার ফিরে পাওয়ার আত্মপ্রত্যয়ের আওয়াজ। এই বজ্র-নির্ঘোষ আওয়াজ শেলের মতো বিঁধছে শেখ হাসিনার বুকে। লুটপাট-খুন-গুম নির্যাতনে ডুবে থাকা সরকারের নেতারা ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে নির্ঘুম হয়ে গেছেন। সরকার পতনের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে দিক-দিগন্তে।’

রিজভী বলেন, বিপুল জনসমাগম দেখে তারা উন্মাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। হুড়মুড় করে এই বুঝি গণভবনে ঢুকে পড়লো গণতন্ত্রকামী লাখো জনতার উত্তাল স্রোত-এমন দুঃস্বপ্ন প্রতি মুহূর্তে মনে হয় তাড়া করছে শেখ হাসিনাকে। এ কারণে জনতার দুর্বার আন্দোলনের কথা শুনে হিংস্র হয়ে উঠেছেন তারা।

বেগম খালেদা জিয়া ইতিহাসের চরমতম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দাবি করে দলটির এই মুখপাত্র বলেন, কয়েকদিন ধরে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আবারও নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস। তাদের এই হুংকারে ফের জনগণের সামনে প্রমাণিত হলো দেশের মানুষের প্রাণের স্পন্দন সবচেয়ে জননন্দিত খালেদা জিয়া ইতিহাসের চরমতম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারারুদ্ধ।

‘শেখ হাসিনা তার ক্যাঙ্গারু কোর্টে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলার ফরমায়েশি রায়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করছেন। রাষ্ট্রের বিধিবিধানকে পদদলিত করে চলেছেন। আইন-আদালত যে তাদের ইশারায় চলে সেই সত্যটা নিজেদের মুখেই স্বীকার করেছেন হাছান মাহমুদ ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস। এতেই বোঝা যায় বিচারক এবং আদালত সর্বোপরি প্রশাসন আওয়ামী লীগের তল্পিবাহকের ভূমিকা পালন করে।’

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কৃপা কিংবা ক্রোধের ওপরই দেশ শাসিত হচ্ছে। দেশের ও তার নিজের দলের প্রকৃত অপরাধীদের তিনি কৃপা করছেন, আর ফ্যাসিবাদের সমালোচনাকারীদের পরিণতি হচ্ছে মিথ্যা মামলায় কারাবরণ কিংবা অন্যকোনো ভয়ানক পরিণতি। বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকার মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। অথচ বর্তমান সময়ে প্রতি বছর লাখো কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে এবং সেই টাকা পাচার হচ্ছে। এরাই আবার সিঙ্গাপুরে শ্রেষ্ঠ ধনী হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে।

‘তারা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। বিগত ১৩/১৪ বছর ধরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এদের শেখ হাসিনা দিয়েছেন আইন করে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি।’

তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি, আইন আদালতে আওয়ামী চেতনার পরীক্ষিত ব্যক্তিদের বসিয়ে অভিনয় করানো হয়। কিন্তু আসল রায় আসে গণভবন থেকে। প্রাণ বাঁচাতে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এই কথা প্রকাশ্যে বলেছিলেন। ‘‘বিচার-আচার সব এক জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।’’

‘খালেদা জিয়া কারাগারে থাকবেন, না বাইরে থাকবেন সেটা প্রধানমন্ত্রী ঠিক করেন! খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলা-জেল এগুলো আসলে অপরাধের কারণে নয়, তিনি সম্পূর্ণরূপে নিরপরাধ। শুধুমাত্র নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধরে রাখার চক্রান্তে নিজের পথের কাঁটা দূর করতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য মামলায় সাজা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়াকে নিয়ে হাছান মাহমুদ ও শেখ ফজলে নুর তাপসের হুংকারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ভীরু ও কাপুরুষের দল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রটেকশনে গুন্ডা ও সন্ত্রাসীরা বাহাদুরি দেখায়। প্রকৃত সাহসী ও বীরদের কখনোই ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার নজীর নেই সারা দুনিয়াতে। যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশকে ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না, তারাই রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় গুন্ডাপান্ডাকে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে লেলিয়ে দেয়। সংগ্রামী জনতাকে নতি স্বীকার করানোর জন্য জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবীর আন্দোলনকে দমাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুন্ডাদের লেলিয়ে দেওয়া শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত চক্রান্তের অংশ।

‘জনগণের সমর্থন হারিয়ে এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হিংসা ও হত্যায় আগ্রহী একটি দল। তারই কুৎসিত প্রমাণ দিলো আজকে চট্টগ্রাম বিভাগের মহাসমাবেশে আগত জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর রক্তাক্ত আক্রমণের বিভৎস রুপ দেখিয়ে। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে খুনি-বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করেছে।’

রিজভী আরও বলেন, এত অত্যাচার-আক্রমণ-চক্রান্ত-সন্ত্রাস-খুন-বিশ্বাসঘাতকতা ও কুৎসা সত্ত্বেও জনগণের আন্দোলন থেমে থাকবে না। পথে বাধা ও নেতাকর্মীদের ওপর শারীরিক আক্রমণ সত্ত্বেও আজ চট্টগ্রামের পোলো গ্রাউন্ডের মহাসমাবেশে জনতার ঢল নামবে। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও জনগণকে কাবু করা যায় না। আজকে চট্টগ্রামে সমাবেশের সফলতা সেটিরই আজ প্রমাণ হবে।

‘চট্টগ্রামের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতরাত থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এ ধরনের কাপুরুষোচিত ও বর্বরোচিত হামলা, গুরুতর আহত করাসহ চট্টগ্রাম মহানগরে নেতাকর্মীদের বাসায় ও হোটেলগুলোতে পুলিশের তল্লাশি ও পথে পথে বাধা দেওয়ার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।’

এ সময় তিনি গাজীপুরে পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানান। রিমান্ডে নিয়ে বিএনপি নেতাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু উপস্থিত ছিলেন।

 

নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা

 


প্রকাশক : মো: মিরাজুল ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক: শফিকুল ইসলাম

© ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | আজ বাংলা মিডিয়া লিঃ এর একটি প্রতিষ্ঠান।

ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com

বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭