মিয়ানমারে রাখাইনে ফের সহিংসতায়, ১৯ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: রবিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:৩৪ রাত | অনলাইন সংস্করণ
|
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডু শহরে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) হামলায় দেশটির সীমান্তরক্ষী পুলিশের অন্তত ১৯ সদস্য নিহত হয়েছেন। মংডু পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকি আরাকান আর্মির দখল এবং পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের পর রাখাইনে ফের বিমান হামলা শুরু করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মিয়ানমারের দৈনিক দ্য ইরাবতি বলছে, বুধবার বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মংডু শহরের একটি তল্লাশি চৌকি দখলে নিয়ে মিয়ানমারের ১৯ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে আরাকান আর্মি। এ সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা ওই তল্লাশি চৌকি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য অস্ত্র লুট করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে ইরাবতি বলেছে, বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অন্তত তিনবার হামলা চালিয়েছে। মংডুর এক বাসিন্দা ইরাবতিকে বলেছেন, সকালের দিকে দুটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বিকেলের দিকে আরও দুটি যুদ্ধবিমান এবং দুটি হেলিকপ্টার থেকে ফের হামলা চালানো হয়েছে। মিয়ানমার জান্তা বলেছে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তল্লাশি চৌকির দখল পুনরুদ্ধারে সৈন্যরা মংডুর ওই এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অভিযানে সৈন্য সংখ্যা এবং গোলাবারুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেছেন, বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলা চালানোয় মাটি কেঁপে উঠেছে। বোমার আওয়াজ এত তীব্র ছিল যে, অনেকে কিছু সময়ের জন্য কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছিলেন না। সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির সদস্যরা হামলা শুরু করায় গত ২ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পালেৎওয়া শহর, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের মংডু ও এর আশপাশে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়েছে। আরাকান আর্মির হামলার পর থেকে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের পাশাপাশি মিয়ানমারের সৈন্যরা ছয়টি স্থল ঘাঁটি থেকে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ গোলা বর্ষণ করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় মংডু এবং এর পার্শ্ববর্তী বুথিডং শহরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এর আগে, বুধবার পালেৎওয়ার মায়েক ওয়া গ্রামের কাাছে গোলাবর্ষণে মিয়ানমার জান্তার অন্তত ১০ সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আরাকান আর্মি। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকেও রাখাইন রাজ্যের আন শহরে আরও কয়েকজন সৈন্যকে হত্যার দাবি করেছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠী। রাখাইনের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ির বহর আন শহরের মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় আরাকান আর্মির সদস্যদের অতর্কিত হামলার মুখোমুখি হয়। এই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর একটি গাড়ি জ্বলছে। অতীত ফিরছে? ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলার পর রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত মংডু, বুথিডং শহরে রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযান শুরু করেছিল মিয়ানমার। রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এই অভিযান রোহিঙ্গাদের গণহত্যার উদ্দেশে চালানো হয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। রাখাইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগের মুখে সেই সময় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তার আগের তিন দশকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সহিংস নির্যাতন থেকে বাঁচতে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। দফায় দফায় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় সেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়ে চুক্তি ও আলোচনা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। এর মাঝেই রাখাইনে ফের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর স্থল ও আকাশ থেকে চালানো হামলায় বাংলাদেশ সীমান্তমুখী ঢল শুরু হতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭