পেঁপে খবার উপকারিতা
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:১২ বিকাল | অনলাইন সংস্করণ
|
পুষ্টিকর ও ভেষজ গুণসম্পন্ন পেঁপে পরিচিত ও সহজলভ্য ফল। মিষ্ট পাকা পেঁপের রং, সুবাস আর স্বাদে অতুলনীয়। পুষ্টিগুণের জন্য বিশ্বে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে পেঁপে একটি অন্যতম খাবার। তরকারি হিসেবেও বেশ কদর রয়েছে। এ ছাড়া সালাদ, জেলী, হালুয়া, মোরব্বা ও জুস সহ উপাদেয় খাদ্য তৈরি হয় এই পেঁপে দিয়ে। পেঁপে, সারাবছর-ই এর ফুল-ফল মেলে। কাঁচা-পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। আবার এটি পথ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পেঁপের ইংরেজি নাম পাপায়া। বৈজ্ঞানিক নাম কারিকা পাপায়া। ইউনানী নাম পাপিতা এবং আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী। এই ফলের উৎপত্তি স্থান মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চল ও কোস্টারিকা। বাংলাদেশসহ ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশে হয়ে থাকে। এটি একটি ছোট আকৃতির অশাখ বৃক্ষবিশেষ। লম্বা বোটাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। পেঁপে গাছ দ্বিবীজপত্রী চিরহরিৎ ভঙ্গুর। কাণ্ড ঈষৎ ফাঁপা ও নরম। স্ত্রী এবং পুরুষ গাছ আলাদা আলাদা হয়। প্রায় সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। কাঁচা-পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা ফল সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। কাঁচা ফল বাইরের দিক গাঢ় কালচে সবুজ ভেতরে সাদা এবং পাকলে খোসাসহ কমলা রং ধারণ করে। বিভিন্ন জাতের পেঁপে দেখা যায়। যেমন- হানিডিউ, রাঁচি, আর্লিবাউন্টি, পূষা, সোলা, সিমলা, শাহী রেডলেডী ইত্যাদি। কাণ্ডের খুব নিচ হতে ফল ধরে। পেঁপের ফল,পাতা ও আঠা ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পাতা ও অপক্ক ফল তরুক্ষীর সমৃদ্ধ। এই তরুক্ষীরে প্রচুর পরিমাণে হজমকারী এনজাইম প্যাপাইন,কাইমো-প্যাপাইন বিদ্যমান। এছাড়া পাতায় অ্যালকালয়েড, গ্লুকোসাইড এবং ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত সব রোগীদের পেঁপে পাতার রস খেতে বলা হয়। ডেঙ্গু হলে শরীরে প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে। পেঁপে পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া উপাদান। এতে থাকা এসিটোজেনিন যৌগ ম্যালেরিয়া সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কাঁচা হোক বা পাকা, পেঁপে শরীরের জন্য ত্বকের জন্য একটি ওষুধ হিসাবে মনে করা হয়। পাকা পেঁপে খাওয়ার পরে, তাদের খোসার সাহায্যে, আপনি মুখের জন্য একটি ভাল খোসার মাস্ক তৈরি করতে পারেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত শরীরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল এবং ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। ১৫০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে ৬০ গ্রাম ক্যালোরি রয়েছে। এতে ভিটামিনের পুরো পরিবার রয়েছে। এতে ভিটামিন বি, ই, সি এবং বি৯ অর্থাৎ ফোলেট পাওয়া যায়। এটি ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ খনিজগুলোর সঙ্গে অনেক ফাইটোকেমিক্যাল, ক্যারোটিনয়েড এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগও সরবরাহ করে। এই পদার্থগুলো যে কোনও রোগ শুরু হওয়ার আগেই তা দূর করার ক্ষমতা রাখে। পেঁপে হার্ট-এর পাশাপাশি পান ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা, আরও রোগ হবে দূর। এর জন্য আপনাকে শুধু পাকা পেঁপে খেতে হবে। আসুন জেনে নেই এই পাকা পেঁপের অন্যান্য উপকারিতা সম্পর্কে। হার্ট-এর জন্য ভাল প্রতিদিন পাকা পেঁপে খাওয়া রক্ত সঞ্চালনে হোমোসিস্টিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। হোমোসিস্টাইন এমন একটি রোগ যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি খাওয়ার ফলে এলডিএলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এ ছাড়া পটাসিয়াম মানসিক চাপ কমাতে সবচেয়ে কার্যকরী প্রমাণিত হয়। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আর্দশ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখা উচিত। পেঁপে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করে। ক্যানসার প্রতিরোধক কাঁচা পেঁপে শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে রয়েছে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম। এই উপাদানটি প্রটিন হজম করতে সাহায্য করে । ক্যানসার নিরাময়েও ভূমিকা রাখে, এই জন্য পেঁপে রান্নার পরিবর্তে কাঁচা খাওয়াটাই উত্তম। পেঁপেতে আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণের.অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনোক্সিড যা দেহে ক্যান্সারের কোষ তৈরিতে বাঁধা দেয়। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথস ডিপার্টমেন্ট-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁপের বিটা কেরোটিন উপাদান কোলন ক্যান্সার, প্রোসটেট ক্যানসার প্রতিরোধ করে। কোলেস্টেরল হ্রাস করে পেঁপেতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে বাঁধা প্রদান করে। ধমনীতে চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাকের মত ঘটনাও ঘটতে পারে। সাথে কাঁচা পেঁপে খেলে মেদ কমে, এতে কোনো খারাপ কোলস্টেরল, চর্বি বা ফ্যাট নেই। মোটা মানুষ দুশিন্তা মুক্ত হয়ে খেতে পারেন। হজমশক্তি বাড়াতে হজমের গোলমাল একটি ব্যাপক সমস্যা। হজমশক্তি কমে গেলে অম্বল হয়ে যায়, মুখে চোকা ঢেকুর ওঠে, পেট ব্যথা শুরু হয়। কখনো চিনচিনে ব্যথা, কখনো ভয়ঙ্কর ব্যথা হয়। কখনো কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় না আর কখনো পেট খারাপ হয়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, শরীরে অবসাদ দেখা দেয়। পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম আছে যা খাবার হজমে সহায়তা করে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই। এই ভিটামিন গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়া পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা চোখের জন্য উপকারী। সেরা অনাক্রম্যতা বুস্টার যদি কেউ বারবার কানের সংক্রমণ, সর্দি এবং ফ্লু থেকে দূরে রাখতে চান, তবে পেঁপেতে উপস্থিত ভিটামিন এ, সি এবং ই এটি থেকে মুক্তি পেতে সেরা বলে মনে করা হয়। পাকা পেঁপে ভিটামিন সি-এর সেরা উৎস হিসেবে মনে করা হয়। সেই সঙ্গে এতে ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণও পাওয়া যায়। পেঁপে সেবন এনিমার সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এবং মাথাব্যথা দূর করার জন্যও এটি সেরা বলে মনে করা হয়। আমাশয় আমাশয় ও পেটে যন্ত্রণা থাকলে কাঁচা পেঁপের আঠা ৩০ ফোঁটা ও ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে হবে। একবার খেলেই পেটের যন্ত্রনা কমে যাবে এবং আমাশয় কমে যাবে । আমাশয় থেকে মুক্তি পাওয়ার অদ্ভুত শক্তি আছে কাঁচা পেঁপের আঠায়। হাড়ের ব্যথা রোধে পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে ব্যথা হ্রাস করে। স্ট্রেস হ্রাস করতে সারাদিন ক্লান্তি এক নিমিষে দূর করে দিতে পারে এক প্লেট পেঁপে। এতে থাকা ভিটামিন সি স্ট্রেস হ্রাস করে। প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আমাদের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। উচ্চরক্তচাপ কমাতে কাঁচা পেঁপে আমাদের দেহের সঠিক রক্ত সরবরাহে কাজ করে। রক্তচাপ বাড়লে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। হঠাৎ পড়ে গেলে শরীরের কোন অংশ অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, শরীরে অসাড়তা দেখা যায়। উচ্চরক্তচাপ আক্রান্তরা কাঁচা বা পাঁকা পেঁপে ব্যবহার করতে পারেন। অনিয়মিত মাসিক পরিত্রাণ করতে পেঁপে খাওয়ার ফলে আপনার অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়ে যাবে। সুতরাং যাদের মাসিকের সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন। শ্বাস- প্রশ্বাসের আরোগ্য শ্বাস- প্রশ্বাসের আরোগ্য ক্ষেত্রে পেঁপের ভূমিকা অনেক। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা কমে যায়। চোখের জন্য ভাল অপথ্যালমোলজি আর্কাইভস প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন তিনবার পেপে খেলে চোখের বয়সজনিত ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। বয়স্কদের মধ্যে দৃষ্টি ক্ষতি প্রাথমিক কারণ, প্রতিদিনের খাবারে তলনামূলক ভাবে কম পুস্টি গ্রহণ করা। পেঁপে আপনার চোখের জন্য ভাল এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ, সি, ও ই এর উপস্থিতির কারণে। ব্রণ ও কালো দাগ তুলতে পাকা পেঁপে কালো দাগ দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পাকা এক টুকরো পেঁপে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভালো করে ঘষে দিন। আধা ঘণ্টা রাখুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩/৪ বার এভাবে করতে থাকেন। পেঁপেতে থাকা প্যাপিন মরা কোষ দূর করে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে তোলে।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭