ডিম-মুরগির দাম বাড়িয়ে ১৫ দিনে ৫২০ কোটি টাকা লুট
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: শনিবার, ২০ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৪ বিকাল | অনলাইন সংস্করণ
|
বাজারে ডিম এবং মুরগির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের ‘কারসাজি ছিল’ বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠনটি এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহে ফারাক ছিল বলেও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিপিআইসিসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিপিআইসিসির সমন্বয়ে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং তৃণমূল খামারিদের সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করত হবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে খোলাবাজারে ডিম ও মুরগির হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ায় একই সঙ্গে উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছে কাউন্সিল। এ অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডিমান্ড-সাপ্লাই গ্যাপ ও সুযোগ সন্ধানী মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের মুনাফা লোফার অপপ্রয়াস প্রধানত দায়ী।’ ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিপিআইসিসির সমন্বয়ে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়। গত ১৬ আগস্ট বিপিআইসিসির জরুরি বৈঠকে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ আগস্ট পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মুরগির দর ছিল ১৩৬ টাকা। বাদামি ডিম প্রতিটির দর ছিল ৯ টাকা ১০ পয়সা ও সাদা ডিম ৮ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু ওইদিন রাত ১২টার পর থেকে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের নতুন বর্ধিত দাম কার্যকরের ঘোষণা আসে। এর পরদিন অর্থাৎ ৭ অগাস্ট থেকে বাস-ট্রাক-পিকআপসহ পরিবহনের সংকট দেখা দেয়। অনেক মালিক পরিবহন বন্ধ করে রাখে, অনেকে আবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। বিবৃতিতে বলা হয়,‘ ডিম ও মুরগির ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের জোগান দেয় গ্রামীণ খামারিরা, তাই পরিবহন সংকটে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা ও বিভাগীয় শহরে সরবরাহ কমে যায়, বাড়ে দাম। ১৩ ও ১৪ আগস্ট মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কারসাজিতে দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। পাইকারি পর্যায়ে বাদামি ডিম ১০ টাকা ৯০ পয়সায় এবং ব্রয়লার মুরগির দর ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায় উঠে।’ টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকা হয়ে ওঠে। বিপিআইসিসি বলছে, ‘এ দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ খামারিদের কোনো হাত নেই। পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এলে ১৫ অগাস্ট থেকে দর পুনরায় কমতে শুরু করে।’ গত বৃহস্পতিবারের তথ্য তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রয়লার মুরগির পাইকারি দর প্রতি কেজিতে প্রায় ৪০-৪৫ টাকা কমে ১৩০-১৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। এ ছাড়া বাদামি ডিমের দর প্রতি একশতে ১৩০ টাকা কমে ৯৬০ টাকায় (প্রতিটি ৯ টাকা ৬০ পয়সা) ও সাদা ডিম ১৪০ টাকা হ্রাস পেয়ে ৯৫০ টাকায় (প্রতিটি ৯ টাকা ৫০ পয়সা) বিক্রি হয়েছে। বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান জানান, বর্তমান সময়ে এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খামারির খরচ পড়ে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা এবং ডিমের খরচ নূন্যতম ৯ দশমিক ৫০ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন, পণ্য আমদানিতে মাত্রাতিরিক্ত জাহাজ ভাড়াসহ লোডশেডিংয়ের কারণে ‘ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে’। মসিউর রহমান বলেন, ‘উদ্বেগের বিষয়টি হচ্ছে খামারিরা লোকসান গুনলেও মধ্যস্বত্তভোগীরা অন্যায্য মুনাফা লুটছে। ফলে খামারি ও ভোক্তা উভয়েই প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) এর সভাপতি কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘পোল্ট্রির সাপ্লাই সাইড দুর্বল হয়ে পড়ছে। কারণ লোকসানের ভয়ে অনেক খামারি এ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন।’ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন বয়সী সাদা ব্রয়লার বাচ্চার সাপ্তাহিক উৎপাদন যেখানে ছিল ১ কোটি ৮০ লাখের ওপরে বর্তমানে তা ১ কোটি ৩০-৩৫ লাখে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি। গত মে মাসে ব্রয়লার বাচ্চা গড়ে ১৬ টাকা ৬৫ পয়সা ও লেয়ার বাচ্চা ২০ টাকা ৭৪ পয়সায় বিক্রি হয়। জুন মাসে ব্রয়লার বাচ্চা গড়ে ৮ টাকা ০৭ পয়সা ও লেয়ার বাচ্চা ১৩ টাকায়। জুলাই মাসে ব্রয়লার বাচ্চা ১৮ টাকা ৭১ পয়সা ও লেয়ার বাচ্চা ১৩ টাকা ৯৫ পয়সায় বিক্রি হয়।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা |
ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭