চট্টগ্রামে ৫ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: বুধবার, ১৭ আগস্ট ২০২২, ০৭:৩৭ বিকাল | অনলাইন সংস্করণ
|
চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরে বোমা হামলার ঘটনায় পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের বিচারক আবদুল হালিম এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মনোরঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত আসামি নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য এম সাখাওয়াত হোসেন (হামলার সময় প্রেষণে র্যাবে কর্মরত ছিলেন, ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান), ঈশা খাঁ ঘাঁটির বলকিপার আবদুল মান্নান, রমজান আলী ও বাবলু রহমান ওরফে রনি এবং মান্নানের বড় ভাই আবদুল গাফফারকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাখাওয়াত পলাতক। অন্যরা রায় ঘোষণার সময় হাজির ছিলেন। পরে তাঁদের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরে জুমার নামাজের সময় পতেঙ্গা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর দুটি বোমা (গ্রেনেড) নিক্ষেপ করেন আবদুল মান্নান। এ সময় ভীতসন্ত্রস্ত মুসল্লিরা ছোটাছুটি শুরু করলে হামলাকারী মান্নান ভিড়ের সঙ্গে মিশে যান। কিন্তু তাঁর বাঁ হাতের কবজিতে ইলেকট্রিক সুইচ দেখে মুসল্লিরা তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তখন আবদুল মান্নান আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে সফল হননি। পতেঙ্গা মসজিদে হামলার ১০ মিনিট পর ঈশা খাঁ ঘাঁটির আরেকটি মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ওই মসজিদে জুমার নামাজ শুরু হলে রমজান আলী মসজিদের মাঝবরাবর দুটি বোমা (গ্রেনেড) নিক্ষেপ করে মুসল্লিদের সঙ্গে মিশে যান। পরে তাঁকেও ধরে ফেলা হয়। ওই দিন দুটি মসজিদে বোমা হামলায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তাসহ ২৪ জন মুসল্লি আহত হন। হামলার ৯ মাস পর ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নৌবাহিনীর নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল কমান্ডার এম আবু সাঈদ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানায় মামলা করেন। ঘটনার ২২ মাস পর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। চার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছেন, দেশের প্রচলিত আইন তাঁরা মানেন না। সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য সাখাওয়াত হোসেনের মাধ্যমে কাপ্তাইয়ে শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে মান্নান ও রমজান ক্যানটিন বয় হিসেবে কাজ নেন। রমজান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা পাস করলেও অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়ে এ কাজ নেন। মান্নান, রমজান ও বাবলু পরিচয় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন করে ২০১২-১৩ সালে অস্থায়ী বেসামরিক কর্মচারী (ক্যানটিন বয়, ব্যাটম্যান, বলকিপার) হিসেবে কাপ্তাই বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে কাজ নেন। জেএমবি চট্টগ্রামের প্রধান ফারদিনের পরামর্শে তাঁরা এ কাজ করেন। শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে বাবলুর কাছে চেয়ারম্যান সনদ চাওয়া হলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ভয়ে তিনি ঘাঁটি ত্যাগ করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, হামলার আগের দিন ফারদিন ব্যাগে করে পাইপবোমা এবং গ্রেনেড মান্নান ও রমজানকে হস্তান্তর করেন। তাঁরা ঘাঁটিতে নিজেদের কক্ষে তা জমা রাখেন। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে নৌবাহিনীর শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটি থেকে অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা ছিল জেএমবির। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল না হওয়ায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির সুরক্ষিত এলাকার দুটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা করেন নিষিদ্ধঘোষিত এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। জেএমবির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিকল্পনায় সংগঠনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক রাইসুল ইসলাম খান ওরফে ফারদিন ওরফে নাফিসের (বোমা বিস্ফোরণে নিহত) নেতৃত্বে ঈশা খাঁ ঘাঁটিতে হামলা হয়। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল বগুড়ার শেরপুরের একটি মেসে গ্রেনেড তৈরি করতে গিয়ে নিহত হন তিনি। যে কারণে এজাহারে আসামি হিসেবে ফারদিনের নাম থাকলেও অভিযোগপত্র থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। ১ আগস্ট যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। এদিকে একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় সাক্ষ্য চলছে এখনো।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা |
ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭