কেন স্যামসাং ‘যুবরাজ’কে ক্ষমা করলো দক্ষিণ কোরিয়া
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: শনিবার, ১৩ আগস্ট ২০২২, ০৯:২৩ রাত | অনলাইন সংস্করণ
|
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়ল ঘুষ লেনদেন ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত স্যামসাং ইলেকটনিক্সের ভাইস চেয়ারম্যান জে ওয়াই লি’কে ক্ষমা করে দিয়েছেন। দেশটির আইন মন্ত্রণালয় পরে জানায়, ‘জাতীয় অর্থনৈতিক সংকট’ কাটিয়ে উঠতে এ ব্যবসায়ী নেতার সহযোগিতা দরকার, সেজন্যই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। কী অপরাধ ছিল লি’র? স্যামসাং যুবরাজ লি’র অপরাধ তিনি ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাইকে ঘুষ দিয়েছিলেন। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন পার্ক। এর জন্য দু’বার জেলে জেতে হয় লিকে। তার ঘুষের অপরাধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা তার নাম দিয়েছিলেন ‘ক্রাউন প্রিন্স অব স্যামসাং’। স্যামসাংয়ে তার নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য একটি একীভূতকরণ (মার্জ) প্রক্রিয়ার দরকার ছিল। কিন্তু কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারেরা সে প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। তখন একীভূতকরণের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য প্রেসিডেন্ট পার্ক ও তার সহযোগীকে ৮০ লাখ ডলার ঘুষ দেন লি। এ দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে এলে কয়েক লাখ দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিবাদ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীরা ২০১৬/২০১৭ সালের শীতকালে প্রতি সপ্তাহান্তে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানাতেন। তাদের দাবি ছিল, পার্ক সরকারের পদত্যাগ এবং রাজনীতি ও ব্যবসায়র মধ্যকার এ ধরনের সম্পর্কের সমাপ্তি। অবশেষে ২০১৭ সালে অভিশংসিত হন পার্ক। তাকে ২৫ বছরের জন্য কারাগারে যেতে হয়। তার এক বছর পর ২০১৮ সালে স্যামসাংয়ের তহবিল তছরুপসহ অন্যান্য অপরাধে কারাভোগের আদেশ হয় লি’র। প্রেসিডেন্ট পার্কের এক বন্ধুর মেয়েকে কোম্পানির তহবিল থেকে আট লাখ ডলার দিয়ে একটি ঘোড়া কিনে দিয়েছিলেন লি।
কেন তাকে ক্ষমা করল সরকার?
পার্কের ক্ষমতাচ্যুতির পরে নতুন প্রেসিডেন্ট হন মুন জে-ইন। তিনি চেয়েছিলেন সব সংকটের শেষ দেখতে। কিন্তু ব্যর্থ হন মুন। পরে নিজে ক্ষমতা ছাড়ার আগে পার্ককে ক্ষমা ঘোষণা করেন তিনি। পার্ক ক্ষমা পাওয়ার আট মাস পরে নতুন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ক্ষমা পেলেন জে ওয়াই লি। আর দেশটিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা মানুষগুলোর জন্য এ ঘোষণা তীব্র চপেটাঘাত হিসেবেই পরিণত হলো। এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার বিচারমন্ত্রী হান দোং হুন বলেছেন, “জাতীয় অর্থনৈতিক সংকট দ্রুত মোকাবিলা করার নিমিত্তে, আমরা যথেষ্ট বিবেচনার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ ও চাকরি সৃষ্টিকারী অর্থনৈতিক নেতাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচন করেছি। " দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট একজন ব্যবসায়পন্থী মানুষ। স্যামসাং বসের সঙ্গে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমা আরও পেয়েছেন লোটে গ্রুপের চেয়ারম্যান শিন দোং বিন। ঘুষ দেওয়ার অপরাধে তাকেও আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ক্ষমা পাওয়ার পর তিনি দেশের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, বৈশ্বিক এ সংকট কাটাতে তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান অবদান রাখবে।
কোম্পানির বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো লি-ই নেন বলে জানা গেছে। ক্ষমা ঘোষণার পর এখন তার ওপর আর কোনো ‘নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা’ রইলো না। অর্থাৎ পুরোদমে স্যামসাংকে পরিচালনা করতে পারবেন তিনি। এজন্য ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই এসব বড় বিনিয়োগ বিষয়ে ঘোষণা দেবে স্যামসাং। তবে বর্তমান ক্ষমার অর্থ হলো লি এখন আগের চেয়ে আরও স্বাধীনভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে পারবেন। আর এই ক্ষমার মাধ্যমে তার জন্য স্যামসাংয়ের ব্যবসায় নতুন মোড় আনার পথ সুগম হলো।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা |
ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭