ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকের উপর হামলা, পিটিয়ে রক্তাক্ত করে
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ০৯ আগস্ট ২০২২, ০৫:৫৭ বিকাল | অনলাইন সংস্করণ
|
নির্মম আঘাতে তার কানের পর্দা ছিড়ে গেছে। কানে কম শুনতে পাচ্ছেন। দাঁতের মাড়ি কেটে গেছে। চোখের ডান পাশে রক্ত জমাট বেঁধেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসাইনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। রোববার (৭ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ হামলা হয়। অব্যাহত হামলায় তার নাক, চোখ, দাঁত ও কানে গুরুতর জখম হয়েছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে কে-৭৩ ব্যাচের এই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, নির্মম আঘাতে তার কানের পর্দা ছিড়ে গেছে। কানে কম শুনতে পাচ্ছেন। দাঁতের মাড়ি কেটে গেছে। চোখের ডান পাশে রক্ত জমাট বেঁধেছে। নাকের সেপ্টাম ইঞ্জুর্ড হয়েছে। তাঁর ওপর চলা পাশবিকতার বর্ণনা দিয়ে ডা. সাজ্জাদ আরও বলেন, গত ৭ আগস্ট ৯টার দিকে শহীদ মিনারে যান তিনি। সে সময় মূল বেদির পাশে (উপরে না) মাটির ওপরের রেলিংয়ে বসে বাদাম খাচ্ছিলেন তিনি। তখন কয়েকটি ছেলে এসে তার পরিচয় জানতে চায়। ঢাকা মেডিকেলের বলার পর ডা. সাজ্জাদের পড়াশোনার বর্ষ জানতে চায়? এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার তারা তার আইডি কার্ড দেখতে। আইডি কার্ড দেখাতে না পারায় চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘তাদের সাথে তো ঢাবির আইডি কার্ড আছে।’ এ সময় ডা. সাজ্জাদ ক্যাম্পাসের পাশেই এসেছেন উল্লেখ করে সবাই আইডি কার্ড সাথে নিয়ে ঘুরে কিনা, জানতে চান? সঙ্গে সঙ্গে থাপড়ানো শুরু করে সন্ত্রাসীরা। তিনি অবাক হয়ে জানতে চান, তার দোষ কী? এর পর তাকে দ্বিতীয় দফায় মার শুরু করে তারা। ততক্ষণে ৪/৫ জনের আরেকটি গ্রুপ এসে ইচ্ছামতো পিটায়। তারা তার মাস্ক ছিড়ে ফেলে। কানের নিচে আঘাত করায় তার মাথা ঘুরতে থাকে। নিজেকে রক্ষায় বসে পড়লে মাথায় লাথি মারা হয়। এমনকি সেন্ডেল দিয়ে মাথায় আঘাত করে তারা। ফেসবুক পোস্টে ডা. সাজ্জাদ বলেন, আমি কেন এখনো যাই না এখান থেকে এইটা বলে চিল্লাইতে চিল্লাইতে ইচ্ছামত মারা হইলো। আল্লাহ সাক্ষী এত কিছুর পরেও আমি একটা সিঙ্গেল গালিগালাজও করিনাই। খালি বলছি আল্লাহ বিচার করবে। রিক্সা নিয়ে ববশিবাজার সিগনালের গেইটে ফিরলাম। রুমমেটকে ফোন দিলাম। সে এসে রুমে নিয়ে গেল। এক কানে কম শুনতেসি এরপর থেকে, নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। মাড়িও কেটে গেছে দাঁতের। গালের পাশে ফুলে আছে। চোখ ডান পাশেরটা লাল হয়ে আছে। ইমার্জেন্সিতে গেলাম। পুলিশ কেইস সিলসহ ইঞ্জুরি নোট লিখলো। ইএনটিতে রেফার করলো। নাক দেখে বললো নাকের সেপ্টাম ইঞ্জুর্ড হয়েছে। কান দেখে বলছে, কানের পর্দায় ব্লিডিং স্পট আছে, হিয়ারিং লস আছে কিনা বুঝতে পরশু অডিওগ্রাম করতে হবে। ইন্টার্নশিপে জয়েন করার পর থেকে ঢাবির/বুয়েটের অনেক স্টুডেন্টই হাসপাতলে আসতে দেখসি। যতটুকু হেল্প করার চেষ্টা করসি। স্যারদের কাছেও রোগীর কোন দরকারে গেলে বলছি স্যার রোগী ঢাবির স্টুডেন্ট। পাশের ক্যাম্পাস, নিজেদের লোক ভেবেই এইটা করতাম। আজকে সবকিছুর প্রতিদান পাইলাম। পুরা জীবদ্দশায় কারো সাথে মারামারি করসি বলে মনে পরে না। আমি হলে আছি আজকে ৬ বছর ধরে। যারা চিনেন তারা জানেন, কতটুকু নম্রতার সাথে চলতে চেষ্টা করি। এরপরেও রক্ষা পাইনি এমন অভিজ্ঞতা থেকে। যেই শহীদ মিনার প্রথম বানানো হইসিল ঢামেকের হলে ঢামেকের স্টুডেন্টদের দ্বারা, সেই শহীদ মিনারে ঢামেকের পরিচয় দেওয়ার পরও এইভাবে মাইর খাওয়া লাগলো। আমি কোনদিন শহীদ মিনারকে আমার ক্যাম্পাসের বাইরের কিছু ভাবিনি। এমনকি ঢামেকের আউটডোর গেইটের নামও শহীদ মিনার গেইট।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা |
ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭