পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের প্রচলন কবে?
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০৫:৫২ বিকাল | অনলাইন সংস্করণ
|
হাজারও ছন্দ-কবিতা ও প্রাণের উচ্ছ্বাসে বছর ঘুরে আসে পহেলা বৈশাখ। প্রতি বছর এ দিনকে ঘিরে বাঙ্গালি জাতি আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। থাকে হরেক রকমের খাবার । সেসব আয়োজনের মধ্যে একটি প্রধান উপাদান হল পান্তা-ইলিশ। পান্তা ভাত গ্রামীণ বাঙালি জনগোষ্ঠীর একটি জনপ্রিয় খাবার। এই পান্তা তৈরি করা হয় রাতে খাবারের জন্য রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে তা সংরক্ষণের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রেখে । পরদিন পানিতে রাখা ভাতের নাম হয় পান্তা ভাত। পান্তা ভাত গ্রামীণ মানুষ সকালের নাশতা হিসাবে খেয়ে থাকে। সাধারণত লবণ, কাচা মরিচ ও পেঁয়াজ মিশিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া হয়, অনেকেই আবার এর সাথে আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাউল ভর্তা, শুটকি ভর্তা বা সরিষার তেল দিয়ে পান্তা ভাতের রুচি বৃদ্ধি করে থাকে। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের যোগসূত্র ঠিক কবে থেকে তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না ।শাসক শ্রেণির সুবিধার্থেই বাংলা সালের গোড়াপত্তন হয়েছিল বিষয়টি সকলেরই জানা। অবশ্য পরবর্তীকালে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোটা বাঙালির স্বাতন্ত্র্য সংস্কৃতি ও রীতিতে পরিণত হয়। তবে মুঘল শাসনামলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো, আগত দর্শক শ্রোতাগণ ঐতিহ্যবাহী পান্তাভাত খেতো ।বিংশ শতাব্দীর শেষে শহুরে বাঙালীরা বাংলা নববর্ষকে ঘটা করে উদযাপন শুরু করে। এই দিন বাঙালিরা তাদের ঐতিহ্য হিসেবে ভাজা ইলিশ মাছসহ পান্তা ভাত খাওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়। একুশ শতাব্দীর প্রথম দশকে নববর্ষের সকালে ইলিশ মাছ সহযোগে পান্তা ভাত বাঙালি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। রমনা বটমূলের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের সমন্বয় হওয়ার পর থেকে এ সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। এরপর থেকেই মূলত গ্রাম-শহর একাকার হয়ে যায় পান্তা-ইলিশ সংস্কৃতির সঙ্গে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে চৈত্রের কোন এক বিকালে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সাংবাদিক বোরহান আহমেদ, উনি রমনা বটমূলে পান্তা-ইলিশ চালুর প্রস্তাব দেন, তখন তার সাথে তার সহযোগীরা মিলে, ৫ টাকা করে চাদা তুলে, পুরো আয়োজনের ব্যবস্থা করলেন। বাজার করা হলো, রান্না হলো, রাতে ভাত রেধে পান্তা তৈরি করে, কাঁচামরিচ-শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ ও ইলিশ ভাঁজা নিয়ে পর দিন ‘এসো হে বৈশাখে’র আগেই ভোরে হাজির হলেন বটমূলের রমনা রেষ্টুরেন্টের সামনে। মুহূর্তের মধ্যে শেষ হলো পান্তা-ইলিশ। এভাবে যাত্রা শুরু হলো পান্তা ইলিশের। অপর দিকে, (সম্ভবত একই বা পরের বছর) শহিদুল হক খান এই প্রক্রিয়ার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন।তিনি দাবি করেছেন, নিজ হাতে পান্তার পোষ্টার লিখেছেন, তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ ভাত রেধেছেন, ইলিশ মাছ ভেঁজেছেন, কাঁচামরিচ পেঁয়াজ কেটেছেন, মাটির সানকি সংগ্রহ করেছেন।এবং তিনি এ নিয়ে বিটিভিতে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন! তবে রমনা বটমূলের পান্তা ইলিশের উদ্যোক্তার কৃতিত্ব এককভাবে কেউ নন। বছরের প্রথম দিনে এখানে ঘটা করে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার সংস্কৃতিকে অনেকেই ভাল চোখে দেখেন না। এমনকি তারা বলেছেন এর সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই। অনেকেই আবার বলেন, শহরে পান্তা ভাত খাওয়া আমাদের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ব্যঙ্গ করা। এটি শুরু হয়েছিল টাকা কামানোর ধান্দায়, সংস্কৃতিপ্রেমের জন্য নয়। আজকাল শহরের মানুষের মধ্যে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বছরের শুরুর এ দিনটিতে ইলিশ না খেলে বছরটাই যেন মাটি হয়ে যাবে। |
ই-মেইল: ajbanglaonline@gmail.com
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭