বাংলাদেশকে ৪০ টাকা লিটারে ডিজেল দিতে চায় রাশিয়া
নিউজ ডেস্ক:
|
৪২৫ মার্কিন ডলারে প্রতি টন রাশান ডিজেল সরবরাহ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। এতে প্রতি ব্যারেলের (১৫৯ লিটার) মূল্য দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৪৩ ডলার মাত্র। ডলার ১১০ টাকা হিসেবে ধরলে প্রতি লিটারের আমদানি খরচ পড়বে ৪০ টাকার নীচে। বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরের পর দেশীয় এক আমদানিকারক এমন প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বিশ্বস্ত একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তবে সূত্রটি তার নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেল আমদানি করতে ১২৫ ডলারের মতো খরচ পড়ছে। অপরিশোধিত ক্রুড অয়েল আনতেও ৯০ ডলার খরচ পড়ছে। অর্থাৎ অপরিশোধিত ক্রডের চেয়েও অনেক কম দামে ডিজেল দিতে চায় প্রস্তাবকারী। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে কম দামে রাশান ডিজেল কেনাটা বেশ ঝূঁকিপুর্ণ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। তারপরও ভারতসহ অনেক দেশ সাশ্রয়ী দরে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। ২০২১ সালে এপ্রিল-মে মাসে রাশিয়া থেকে মাত্র ৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের তেল কিনেছিল ভারত ৷ আর ২০২২-এ শুধু মে মাসেই ১৯০ কোটি ডলারের তেল কিনেছে। আগের বছরে চাহিদার মোট দুই শতাংশ রাশিয়া থেকে আসলেও চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে চাহিদার ১০ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে ভারত। সময় যতো যাচ্ছে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণও বাড়াচ্ছে দেশটি ৷ রাশিয়া থেকে সরাসরি ডিজেল আমদানি করতে গেলে পশ্চিমা বলয়ের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। সে কারণে অনেকদিন ধরেই রাশান তেল আমদানির বিষয়ে আলোচিত হলেও সবই ছিল অনানুষ্ঠানিক। কিন্তু ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনার করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত পারলে আমরা কেন পারব না? রুবলের সঙ্গে টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের করা যায় কি না, সেই বিষয়ে উপায় খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর নড়ে চড়ে বসেছে সংশ্লিষ্টরা। বিপিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে একাধিক প্রস্তাব এসেছে। এরমধ্যে একটি প্রস্তাব এসেছে যারা চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস পয়েন্টে ৪২৫ ডলারে ডিজেল পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সবগুলো নিয়ে কাজ করছে সরকার। বিপিসির পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া বলেন, এসব প্রস্তাবের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। হয়ে থাকলেও হয়তো উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে। বাণিজ্য ও অপারেশন বিভাগে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, তারা জানতে পারে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে সুবিধা অসুবিধা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাশান মুদ্রা রুবল ও টাকার বিনিময়ের যে বিষয়টি সামনে এসেছে তারও সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। রুবলে লেনদেন করতে হলে রাশিয়াতে আমাদের রফতানির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ। বাণিজ্য ঘাটতি অনেক বেশি হয় তাহলে সেই ঘাটতি মোকাবিলা হবে কি করে। তখনতো ইউএস ডলার দিয়ে রুবল কিনে পরিশোধ করতে হবে। এতে দুই ধাপে কমিশন দিতে হবে। সৌভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পূর্বে বাংলাদেশের বাণিজ্য ছিল বাটা সিস্টেম। কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ওই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। এ দেশের ব্যাংকে ছিল রাশিয়ান অ্যাকাউন্ট। বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করে তার বিনিময়ে টাকা সেই হিসাব নম্বরে জমা করতো। ওই টাকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনে দেশে নিয়ে যেতো তারা। দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার টেবিলে বাটা সিস্টেমও স্থান পাবে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর আমরা কাজ শুরু করেছি। কিছু প্রস্তাব পাওয়া গেছে সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। এখনই বলার মতো কোন আপডেট নেই। আমরা কাজ করছি আপডেট হলেই জানাবো। রুবলে লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি। ভালো করে ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাই। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের বড় ধরনের ঝাঁকুনির শিকার হয়েছে। এরই মধ্যে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে, রেকর্ড পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে সব ধরনের জ্বালানির দাম। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ডিজেল লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। বিপিসি দাবি করেছে তারপরও লিটারে ৬ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডিজেলের চাহিদা ছিল ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ মে. টন। যা মোট জ্বালানি চাহিদার ৭২.৯৮ শতাংশ। বিপিসির ওই লোকসানের হিসেব আমদানিকৃত ডিজেলের ব্যারেল প্রতি মূল্য ১৩০ ডলার ধরে। সেখানে রাশান ডিজেল পাওয়া যাচ্ছে ৬০ ডলারের নিচে। অর্থাৎ আমদানি মূল্য অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে।
নিউজ ডেস্ক | দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |