শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বরিশাল আ’লীগ সভাপতি ও কাউন্সিলরের ফোনালাপ ফাঁস
নিউজ ডেস্ক:
প্রকাশ: রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩৭ রাত | অনলাইন সংস্করণ

বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে ঘিরে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর এবং সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক বিপ্লবের কথোপকথনের একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।

টানা ১০ মিনিটের এমন একটি কল রেকর্ড এসেছে গণমাধ্যমের কাছে ।

২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর বিপ্লবকে আমন্ত্রণ জানাতে ফোন করা হলে সাদিক আবদুল্লাহকে নিয়ে উচ্চবাচ্চ কথা বলেন সদ্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর রাজনৈতিক শিবিরে ভেড়া বিপ্লব।

তাদের কথোপকথনে শোনা যায়, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম জাহাঙ্গীর ফোন করেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক বিপ্লব এর কাছে। বিপ্লব ফোন রিসিভ করে সম্মান জানান তাকে। কথোপকথনের এক পর্যায় বিপ্লব বলেন, ‘জাহাঙ্গীর ভাই আমরা তো মুরব্বিদের সাথে বেয়াদবি করা শিখিনাই, বাবা-মা আমাদের বেয়াদবি করা শিখায় নাই।’

বিপ্লব আরও বলেন, ‘আমরা তো ৯০ সালে বিএম কলেজে বোমা মারা প্লেয়ার, আমরা তো মুরব্বিদের সম্মান করা শিখছি, আপনারা আমার মুরব্বি, জাহাঙ্গীর ভাই আপনি আমার মুরব্বি, আপনারে সালাম দিব না কাকে দিবো সালাম।’

তিনি বলেন, `আজকে বরিশাল ক্লাব থেকে বের হয়ে যারা বলছে, হাসনাতের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ তাদের নিয়ে সাদিক বরিশালে রাজনীতি করে। আমাদের লাগবে কিসে? আমরা ৮৭ সাল থেকে এই সংগঠন করছি, ও ছিলো কোথায় সাদিক?’

করোনা দুর্যোগের বিষয়টি সামনে এনে জিয়াউল হক বিপ্লব বলেন, ‘করোনায় হাজার হাজার টন চাল দিছে, কোটি কোটি টাকা দিছে, করোনায় আমাদের এক সডাক চাল দেয়নাই, চার আনা পায়সা দেয়নাই। ও সমস্ত কমিশনারগো বিরুদ্ধে কেন্ডিডেট দেয়, দিক ওর কেন্ডিডেটগো লগে আমি যদি বুঝে না খাইতে পারি তাহলে আর বরিশাল শহরে থাকমু না; আপনাদের সাথে আমাদের সম্পর্কের কোন অবনতি হবে না, আপনারা যারা আসেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আপনেরা সব সময় শ্রদ্ধার জায়গায় থাকবেন। কিন্তু ওর সাথে আমাদের কোন আপস নাই। আমরা মইরা যামু জাহাঙ্গীর ভাই, জামায়াত বিএনপি ক্ষমতায় এসে এমনেই আমাদের মেরে ফেলবে, আমি ব্রিগিডিয়ার জিয়ার ছোট ভাই, তারেক জিয়া কোন দিনও বেনজীর আর বিগ্রেডিয়ার জিয়াকে ছাড়বে না।

তিনি বলেন, ও যে অবস্থায় আমাদের নিয়ে রাখছে তাতে আমাদের মাইরা ফালানো ভালো। ও গুরাগারা সামনে বসে বলে কাউন্সিলর কাউন্সিলরের মতো থাক। আমি জিলা স্কুলে পড়া লেখা করছি, এই শহরে আমার জন্ম, এই শহরের প্রতিটা গলি আমার চেনা, আমরা সদর গিয়া বিএনপি’র আমলে মারামারি করছি, আমার মায় বাসার সামনে বইসা রইছে আমার পোলাডায় এখনো আয় না কেন? বাসায় এসে দেখে বাসার সামনে পুলিশের ভিড়, বাসায় ঢুকমু কোন সময় ধরে নিয়ে যায়। নান্নুর রুম পুড়ছি, আমার ভাই জিয়াউল হক স্যারকে বাসার সামনে বসে থাপ্পর মারছে সেন্টু ওরা এসে। আমার বাড়ি ঘর ভাঙচুর করছে ৯৪ সালে, আমি মেবুলকে অস্ত্রসহ ধরে দিছি; ওর নাহান রাজিববা, গ্যাস্টিক বাবু আর ওই জিয়া, ওই ওমুক-সমুক আছিলি কই ওই শ্যালারা। আর ওই একটু একটু পোলাপান, হো্স্েটল মেসের পোলাপান লাইয়া আমরা কোন দিন চলছি, আমরা সব সময় লোকাল লোক লইয়া চলছি।

কথার প্রতি উত্তরে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম জাহাঙ্গীরকে বিপ্লবকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি যে অভিযোগটা দিলা, আমি সেই অভিযোগটা দেয়ার জায়গা পাই না, তোমাদের সাথে যা করে আমার সাথে তা করে না?

প্রতি উত্তরে বিপ্লব বলেন, ‘জামায়াত বিএনপি আসলে ও ইন্ডিয়া চলে যাবে পলাইয়া, আমেরিকা চলে যাউক, কিন্তু আমরা পলামু না, আমরা দেশেই থাকুম, আমরা বোরখা পইরা হইলেও এই দেশে জামায়াত-বিএনপি’র সাথে মোকাবেলা করমু; লাগলে সুন্দরবন যামু, হিলট্যাক্স যামু, তবু এই দেশ ছাড়মু না।

এসময় এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আমন্ত্রণ জানিয়ে বিপ্লবকে বলেন, ‘২৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন, ৪টার প্রোগ্রামে থাকবা।

তখন বিপ্লব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন আমরা আমাগো মতো পালন করতে আছি, আমরাও তো এই দল করি, ও বলছে কাউন্সিলর কাউন্সিলরগো মতো থাক। ও আমাদের যেইভাবে মূল্যায়ন করছে আমরাও ওরে সেইভাবেই মূল্যায়ন করমু, এটা আমাদের ব্যাপার।

এ.কে.এম জাহাঙ্গীরের কথার প্রেক্ষিতে বিপ্লব উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমারতো দলে নাম নাই আমনেগো, ওই সাদিক আবদুল্লাহরে কইয়েন আমাগো দেশ দিয়া সরাইয়া দিতে, আমাগোডা আমি বুইঝা লইতে পারমু। বহুত সহ্য করছি ওর অপমান অপদস্ত, লেবারের সামনে বসে আমাদের ও অপমান করে।’

বিপ্লব আওয়ামী লীগের সভাপতিকে বলেন, ‘আপনে হাসানাত ভাইরে কইয়েন, আমার এই মোবাইল রেকর্ড নিয়া তারে শুনাইয়েন, সাড়ে তিন বছরে লুইট্যা পড়ইরা খাইয়া হালাইছে বরিশাল শহরডারে। ও এখন ঢাকা বইসা নাপিতের ধারে মাপ চায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বিপ্লবকে ধৈর্য্য ধরতে বলেন।, বিপ্লব প্রতিউত্তরে বলেন,‘ধৈর্য্য তো সাড়ে তিন বছর ধরছি, আরও ধৈর্য্য ধরমু, মাখন সব খাইয়া শ্যালায় ফোটবে, ধৈর্য্য ধরমু আর গ্যাস্টিক বাবুর মতো লোক সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে ঘোরবে, আর রাজিবের মতো লাক, যে হাসনাতভাই’র দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, আর হাসানাত মুক্ত বরিশাল চাইছে যারা, ওই শ্যালারা সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে ঘুরবে!

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আমাদের সিনিয়র সংগঠক, আপনারা আজীবন আমাদের কাছ থেকে সম্মান পাইবেন। কিন্তু বেয়াদবের লগে আমাগো ডাইক্কেন না, আমাগো ওর লাগে কিতে, আমরা আওয়ামী লীগ করিনা, ছোট বেলা হইতেই প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন করি, এহনো আমি আমার মতো পালন করমু। আমাকে ওর লাগে না, ও হাসনাত ভাইর থেকেও বড় নেতা। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক, তার চাইতেও সাদিক আবদুল্লাহ বড় নেতা।

কথোপকথনে বিপ্লবকে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র বরাত দিয়ে এ.কে.এম জাহাঙ্গীর বলেন, আমি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র কথা মতোই তোমাকে ফোন দিয়েছি, কথা বলতেছি। তুমি তাকে ফোন দাও, ভাইকে ফোন দাও। তুমি তাকে বল ভাই।’

জবাবে বিপ্লব বলেন, ‘না তাকে বলমু কি, হে মুরুব্বি মানুস, হে ফোন দিয়া আমাকে খোঁজ লাইতে পারে না, হের পোলায় এইয়া করে হে দ্যাহে না, আমি কাউরে ফোন দিতে পারমু না। ও আমার পরিবার সম্পর্কে মন্তব্য করলে ক্যান আমার এলাকায় আইসা। ওর এতো বড় সাহস, বোঝেনা ও আমরা কারা? অপমান অপদস্তের সীমা আছে, ও মেয়রের চেয়ারটা সেগুন কাঠের, আমার কাউন্সিলের চেয়ারটাও সেগুন কাঠের, ওর চেয়ারটা রিবলবিং চেয়ার, আমার চেয়ারটাও রিবলবিং চেয়ার, ও জনগণের প্রতিনিধি কাউন্সিলররাও জনগণের প্রতিনিধি, আমাদের এইভাবে মূল্যায়ন করেনাই সাড়ে তিন বছরে।

কথোপকথনের শেষ অংশে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ.কে.এম জাহাঙ্গীর একমত প্রকাশ করে বলেন, ‘দোয়া করো আরও বড় হোক।’

« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ