আফগানিস্তানে ফের গৃহযুদ্ধে নেমে আসতে পারে : ইমরান খান
নিউজ ডেস্ক:
|
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তালেবানকে সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে তা করতে ব্যর্থ হলে আফগানিস্তানে ফের গৃহযুদ্ধে নেমে আসতে পারে।
মঙ্গলবার বিবিসিতে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যদি তারা সব দলকে অন্তর্ভুক্ত না করে, তাহলে এখন হোক বা পরে তাদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ হবেই’।
ইমরান খান বলেন, গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে মানবিক ও শরণার্থী সংকটের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেইসঙ্গে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আফগান মাটি ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও চিন্তিত। এর অর্থ একটি অস্থিতিশীল, বিশৃঙ্খল আফগানিস্তান তৈরি হবে। এমন একটি দেশ (আফগানিস্তান) সন্ত্রাসীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হবে, যেখানে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই এবং যুদ্ধ চলমান থাকে। দ্বিতীয়ত, গৃহযুদ্ধ হলে মানবিক সংকট দেখা দেবে এবং আমাদের জন্য শরণার্থী সমস্যা তৈরি হবে’।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নতুন তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তিনটি শর্ত দিয়েছেন- নতুন নেতৃত্বকে অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, অবশ্যই মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে এবং আফগানিস্তানকে সন্ত্রাসীদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না, যারা পাকিস্তানের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
তালেবানরা শর্ত মেনে নিলে পাকিস্তান কি আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেবে? এমন প্রশ্নের উওরে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মিলেই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, ‘সব প্রতিবেশী দেশ একত্রিত হবে এবং দেখবে কীভাবে তারা সামনে এগোচ্ছে। তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে কি হবে না সে ব্যাপারে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাকিস্তান অবশ্য ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের তালেবান সরকারের প্রধান মিত্র ছিল।
এর আগে তালেবানের মেয়েদেরকে স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত রাখার কাজকে ইমরান খান অনৈসলামিক বলে মন্তব্য করেন। গত সপ্তাহে, তালেবানরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মেয়েদের বাদ দিয়েছিল, শুধুমাত্র ছেলে এবং পুরুষ শিক্ষকদেরই স্কুলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের এই নেতা বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন, মেয়েরা শীঘ্রই স্কুলে যেতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, তিনি আশা করেন যে, আফগান নারীরা অবশেষে ‘তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে’।
ইমরান খান আফগান ভূখণ্ডের সর্বশেষ এই পরিবর্তনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। ইমরান বলেন, ২০ বছরের গৃহযুদ্ধের পর তালেবানরা ক্ষমতায় এসেছে। তাদের একটু সময় দিতে হবে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বুধবার দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বের উদ্দেশ্যে বলেন, বাস্তববাদী হোন, ধৈর্য দেখান, যুক্ত হোন; সর্বোপরি বিচ্ছিন্ন করবেন না- এগুলোকে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পন্থা হিসেবে দেখছে পাকিস্তান।
একই সঙ্গে পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি রোডম্যাপ তৈরির পরামর্শ দিচ্ছে, যা তালেবানকে কূটনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথ পরিষ্কার করবে।
কোরেশি বলেন, যদি তালেবানরা আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা পূরণ করে, তবে তারা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, যা স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য জরুরি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও অনুধাবন করতে হবে- বিকল্প কি রয়েছে? এটিই বাস্তবতা, তারা কি বাস্তবতা থেকে দূরে থাকতে পারে?’
কোরেশি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতো পাকিস্তানও চায় শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তান। যেখানে সন্ত্রাসীদের কোনো পদচারণা থাকবে না এবং তালেবানকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আফগানিস্তানের মাটি যেন অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা না হয়।
‘কিন্তু আমরা বলছি- আপনারা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) আচরণে আরও বাস্তববাদী হোন। তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার একটি অভিনব উপায় বের করুন। আগে যেভাবে তাদের মোকাবিলা করা হয়েছিল, তা কিন্তু সফল হয়নি’।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং যেসব দেশ আফগানিস্তানের সম্পদ আটকে রেখেছে সেসব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন অর্থ দ্রুত ছাড় করেন। আফগানিস্তানকে ‘স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে’ এসব অর্থ যেন দ্রুত ব্যবহার করা যায়।
রাজনীতি/জেএস
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |