আপনি কী জানেন মিষ্টি আলু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
নিউজ ডেস্ক:
|
আমাদের হাতের কাছে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা শরীরকে সুস্থ করে তুলতে পারে। এমনই একটি খাবারের নাম হল মিষ্টি আলু। মিষ্টি আলু খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিতেও পরিপূর্ণ। মিষ্টি আলু আমাদের অনেক কঠিন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। তাই তো মিষ্টি আলুকে বলা হয় ‘সুপার ফুড’। মিষ্টি আলু বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন লাল, বেগুনি, কমলা, সাদা এবং হলুদ। মিষ্টি আলু বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য শস্য যা আদিকাল থেকে মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে মিষ্টি আলুকে খাদ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের কিছু প্রমাণ মিলেছে পেরুর গুহা থেকে। প্রায় ১০,০০০ বছর আগে সেখানে মিষ্টি আলু পাওয়া যেত বলে নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকগণ। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে যখন বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তখন এই মিষ্টি আলুগুলোকে ইউরোপে নিয়ে যান। এরপর ষোড়শ শতকের দিকে স্প্যানিশদের মাধ্যমে মিষ্টি আলু পৌঁছে যায় ফিলিপাইনে। আফ্রিকা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও এই আলু পৌঁছে যায় পর্তুগীজ বণিকদের মাধ্যমে। ঐ সময়েই দক্ষিণ আমেরিকায় মিষ্টি আলুর চাষ শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং এখনো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে রয়েছে এই মিষ্টি আলুর চল। মিষ্টি আলুতে পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে: ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, পেন্টোথেনিক এসিড, ভিটামিন ‘বি-৬’, পটাসিয়াম, হজমকারক আঁশ, ফসফরাস. ভিটামিন ‘বি-২’, ভিটামিন ‘বি-৩’, ক্যারোটিন, পলিস্যাকারাইড। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গবেষণায় জানায়, একটি মিষ্টি আলুতে ১০০ টির বেশি ভিটামিন এ রয়েছে যা প্রতিদিনের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। মিষ্টি আলুতে রয়েছে অনেক কার্বোহাইড্রেট। এছাড়া মিষ্টি আলুতে প্রোটিন, ক্যালোরি ও ফাইবারে ভরপুর। তাই হাড় শক্ত করা থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী এই খাবার। আসুন সেই সম্পর্কে জানা যাক। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মিষ্টি আলুঃ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে মিষ্টি আলু বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেখা গিয়েছে যে মিষ্টি আলু খেতে পারলে সুগার দ্রুত বাড়ে না। এই আলুতে রয়েছে অনেকটা ফাইবার। এই আলু সিদ্ধ করে খেয়ে নিতে পারলে সমস্যা কমে। একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১৪০ জন ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিদিন ৪ গ্রাম করে মিষ্টি আলু খেতে বলা হয়। ৩-৫ মাস পর দেখা গেল তাদের ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে! ক্যানসার প্রতিরোধঃ শুধু মিষ্টি আলুই নয়, সম্পূর্ণ উদ্ভিদটিই ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। রক্তবর্ণের মিষ্টি আলুগুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং টিউমার প্রতিরোধী উপাদান, যা ভেষজ ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তাইওয়ানে মিষ্টি আলুর পাতাকে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা হয়। এর উপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, মিষ্টি আলুর পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, আলফা-ক্যারোটিন এবং বিটা-ক্যারোটিন, যা ফুসফুসের ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে। উল্লেখ্য, ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ যেকোনো খাবারই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা গেলে সহজেই ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি এড়ানো যায়। কিডনিকে সুস্থ রাখতেঃ মিষ্টি আলুতে পটাসিয়ামও পাওয়া যায়, যা স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে। এর পাশাপাশি এটি কিডনিকে সুস্থ রাখতেও বিশেষ সাহায্য করে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখেঃ মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন, যা চোখের রেটিনার রঞ্জক কোষের বৃদ্ধি ও রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আলসার প্রতিরোধঃ পেটের পীড়ায়, পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধেও মিষ্টি আলুর জুড়ি মেলা ভার। শুধু তা-ই নয়, মিষ্টি আলু গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের আলসার রয়েছে তারা যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি আলু রাখেন, তাহলে আলসার প্রতিকারে কাজ করে। ওজন নিয়ন্ত্রণঃ খেয়েও ওজন কমানো যায়– ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। মিষ্টি আলুতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকলেও রয়েছে জটিল কার্বোহাইড্রেট, যা পুষ্টিগুণে পূর্ণতা দেয়। এতে রয়েছে স্থূলতা নিরাময়কারী উপাদান, যা দেহে চর্বি জমতে দেয় না। ব্যথা দূর করতে সাহায্য করেঃ ভিটামিন এবং খনিজগুলির ঘাটতি আমাদের দেহে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে যা পরে বিভিন্ন জ্বালাময় লক্ষণগুলোর দিকে নিয়ে যেতে পারে। বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়ামের কারণে মিষ্টি আলু ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এই উপাদানগুলি অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক ব্যথা উভয়ের ক্ষেত্রেই অনেক কার্যকর। রক্ত তৈরি করেঃ রক্তকোষ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা আছে এই আলুর। এতে আয়রন থাকে। ফলে তা লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়। মস্তিষ্কের কাজেঃ মানব মস্তিষ্কে যে স্নায়ুকোষগুলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, কারণ এর পটাশিয়াম দারুণ কাজ করে। স্মৃতিশক্তি, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন ডি-র কারণে মেজাজ ঠিক থাকে। হাঁপানির প্রকোপ কমেঃ সপ্তাহে কয়েক দিন রাঙা আলু খেলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিকমতো চলে। ফলে হাঁপানির প্রকোপ কমে। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে রাঙা আলু এই খাবারে অনেকটা পরিমাণে রয়েছে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। হাড়ের জন্য ভালো এই খাবার। এই বিষয়টা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। ব্লাডপ্রেশার কমায় মিষ্টি আলুঃ এই খাবারে রয়েছে ভালো পরিমাণে পটাশিয়াম। এবার এই পটাশিয়াম কিন্তু প্রেশার নিয়ন্ত্রণে দারুণ কার্যকরী হতে পারে। তাই এই খাবার আপনি নিয়মিত খেয়ে নিতেই পারেন। শরীরচর্চায় মিষ্টি আলুর উপকারিতাঃ পটাসিয়াম শরীর গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। কারণ, এটি পেশী নিয়ন্ত্রণ, ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। পটাসিয়ামের পাশাপাশি মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম এবং পেশী গঠনে সাহায্য করে। মিষ্টি আলু যেভাবে খাবেনঃ সিদ্ধ করা মিষ্টি আলুতে সবচেয়ে ভালোভাবে পুষ্টি উপাদানগুলো পাওয়া যায়। খোসাসহ মিষ্টি আলুকে ১/২ টুকরা করে কেটে নিন। এবার একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে আলুর টুকরোগুলো ৭ মিনিট ধরে সিদ্ধ করুন। ৭ মিনিট সেদ্ধ করলে মিষ্টি আলুর সবচেয়ে ভালো স্বাদ পাওয়া যায় এবং এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। যদি আরও একটু স্বাদ আনতে চান, তাহলে এর সাথে দারুচিনি, লবঙ্গ এবং জায়ফল দিয়ে নেবেন। এতে করে স্বাদ বাড়ার সাথে সাথে পুষ্টিগুণও বাড়বে। ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৫ মিনিট পুড়িয়েও খেতে পারেন মিষ্টি আলু। গবেষণায় দেখা গিয়েছে এভাবে প্রস্তুতকৃত মিষ্টি আলুতে বিটা-ক্যারোটিন আলুর সর্বত্র সঠিক মাত্রায় অবস্থান নিতে পারে।
নিউজ ডেস্ক। দৈনিক আজবাংলা
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |